জ্বালানী খরচ বাঁচাতে গোবরের লাকড়িই ভরসা গ্রামীণ নারীদের

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জ্বালানী খরচ বাঁচাতে গোবরের লাকড়ি দিয়ে রান্না করছেন গ্রামীণ নারীরা। এই লাকড়ির ব্যবহার এই অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। গ্রামীণ নারীরা প্রথমে গবাদি পশুর গোবর সংগ্রহ করে পাটখড়ি ব্যবহার করে তৈরি করছেন এসব লাকড়ি।

লালমনিরহাট জেলার প্রত্যন্ত এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা এ লাকড়ি তৈরির কাজ করেন বেশি। গোবরের লাকড়ি এক সময় এই অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারের নারীরা বানাতেন। কালের বিবর্তনে বিলীন হতে চলেছে এই পদ্ধতি। তবে রান্নায় বাড়তি ব্যয় কমাতে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তিস্তা ও ধরলার চরাঞ্চলের নারীরা।

মোগলহাট গ্রামের গৃহিনী জমিলা বেগম বলেন, গ্যাস ও খড়ির অনেক দাম হওয়ায় আমরা গোবরের লাকড়ি
দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ সারি। তবে গোবরের তৈরি এই লাকড়ি ব্যবহারে আমাদের কোনো ক্ষতি হয় না। কাঁচা
গোবরে কিছুটা গন্ধ থাকলেও লাকড়ি শুকানোর পর আর গন্ধ থাকে না।

তিস্তা নদী এলাকা রাজপুর গ্রামের গৃহিনী ফরিদা পারভীন বলেন,আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এসব লাকড়ি বাজারেও বিক্রি করে উপার্জন করতে পারছি।

তাদের কাছে জানা যায়, গোবরের এই লাকড়ি তৈরি খুব সহজ, খরচও কম। এই জ্বালানি তৈরিতে উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন গরু বা মহিষের গোবর, পাটখ ড়ি, ধানের তুষ (কুঁড়া)। গোবরের লাকড়ি তৈরির আগে পরিমাণমতো পাটখড়ি কেটে গোবর ও তুষ (কুঁড়া) একত্রে মিশিয়ে পাটখড়ির সঙ্গে এঁটে রোদে শুকাতে হয়। এ ছাড়া মুঠো করে রোদে শুকিয়েও ব্যবহার করা যায়। যার নাম অঞ্চল ভেদে গোবরের লাকড়ি বা মুঠি বলা হয়।

এ বিষয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট এ
কে এম শামছুল হক বলেন, জ্বালানি হিসেবে গাছ না কেটে গোবর ব্যবহার এটি পরিবেশের জন্য ভালো। কিন্তু
পাশাপাশি জৈব সার হিসেবে অধিক ব্যবহৃত গোবরের যেন সংকট না পড়ে সে দিকটাও ব্যবহারকারীদের ভাবতে
হবে। একটি ভালোর জন্য যেন আরেকটি হুমকির মুখে না পড়ে।

লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খবির হোসেন জানান, গোবর মূলত ক্ষেতের জৈব সার
হিসেবে অধিক হারে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে খড়ি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গোবর দিয়ে তৈরি
লাকড়ি জ্বালানি হিসেবে অনেকে ব্যবহার করছেন। দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে। তবে এটি বাণিজ্যিক ভাবে চালু
হলে কৃষক জৈব সারের সংকটে পড়বে। আর কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়বে। যা শরীর ও স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরিতে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

-টিআই