ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীলফামারী সদর উপজেলাধীন চাঁদের হাট এলাকার অঙ্কুর সিড এন্ড হিমাগারে তদারকি এবং নীলফামারী জেলার হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত অঙ্কুর সিড এন্ড হিমাগারে তদারকি আলুর মজুদ, সরবরাহ পরিস্থিতি, সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয়, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ ও পাকা রশিদ তদারকি করা হয়।
এ সময় মহাপরিচালকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশনের সহকারী পরিচালক নূরউদ্দীন যোবায়ের, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা, জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শামসুল আলম, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, এনএসআই, জেলা পুলিশ এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
অভিযান পরিচালনাকালে অঙ্কুর সিড এন্ড হিমাগারের জেনারেল ম্যানেজার এম এ সাত্তার জানান, এই হিমাগারে মূলত বীজ আলু সংরক্ষণ করা আছে। মৌসুমে আলু সংগ্রহ করতে তারা এজেন্ট নিয়োগ করতে বাধ্য হন। কেননা সকল হিমাগারই এজেন্টের মাধ্যমে আলু সংগ্রহ করে। অঙ্কুর হিমাগার বীজ আলু বেশি সংরক্ষণ করে বিধায় তাদের কাছে কৃষক সরাসরি আলু রাখতে পারে। এজেন্টের মাধ্যমে রাখা আলু বেপারীরা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। নীলফামারীতে নয়টি ব্যক্তি মালিকানাধীন ও দুটি সরকারিসহ মোট ১১টি হিমাগার আছে। সে সকল হিমাগার মালিকবৃন্দ ব্যাংক ঋণ নিয়ে এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ লগ্নি করে। তারাই মূলত বেশি লাভের আশায় বাজার অস্থিতিশীল করছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং নীলফামারী জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, অভিযানে কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিতকরণ, মূল্য সম্বলিত ব্যানার প্রদর্শন ও পাকা রশিদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন ।
একই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ ঘোষ।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মো. সাইফুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), ডা. মো. হাসিবুর রহমান, সিভিল সার্জন নীলফামারী, ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম, উপপরিচালক, নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মো. শফিকুল ইসলাম ডাবলু, সভাপতি, নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স, নূরউদ্দীন যোবায়ের, সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, এ টি এম এরশাদ আলম খান, জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, জয় চন্দ্র রায়, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা, এনএসআই, মো. শামসুল আলম, সহকারী পরিচালক, নীলফামারী জেলা কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নীলফামারী জেলা পুলিশ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার চলবে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি নির্ভর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে যা দেশে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
তিনি বলেন, নিত্যপণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬ এর আওতায় বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশক্রমে সরকার চিনি ও ভোজ্য তেলের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে কৃষি বিপণন আইনে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কে কতটুকু লাভ করবে তার উল্লেখ আছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা আলুর মূল্য নির্ধারণে কোন আইন মানছেন না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু-পেঁয়াজের দর নির্ধারণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত এই মূল্য মেনে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এবং মুনাফা করতে হবে। দেশে আলুর উৎপাদন, সংরক্ষণসহ সকল খরচ হিসেব করে কেজি প্রতি ব্যয় সর্বোচ্চ ২০ টাকা হয়। এই আলু গত জুলাই পর্যন্ত হিমাগার হতে কেজি প্রতি ২২ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকার কমে বিক্রয় হয়েছে। সরবরাহ ও মজুদ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও অগাস্ট মাস থেকে আলুর মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মহাপরিচালক বলেন, দেশে আলুর বর্তমান মজুদের তথ্য অনুযায়ী আলুর কোনো সঙ্কট নেই। অনৈতিক লাভের আশায় কেউ আলু মজুদ করে রাখলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ এর মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের দেয়া তথ্য মতে, আগামী ১৫ নভেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে তারা হিমাগার খালি করে ফেলবেন। হিমাগার মালিকদের পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে হবে, কোনো হিমাগার থেকে সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা মূল্যে আলু বিক্রয় না করলে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নীলফামারী চেম্বারের সভাপতি জনাব শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, আলু ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ প্রদান নিশ্চিত করা হলে এ ধরনের সমস্যা হতে উত্তরণ ঘটতে পারে।
নীলফামারী প্রেস ক্লাব সভাপতি বলেন, আলুর সংকট প্রাকৃতিক নয়। এটি অসাধু ব্যবসায়ীদের সৃষ্টি।তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সরকার নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করতে ব্যাপক মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নীলফামারীতেও অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
সভায় নীলফামারী ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আলুর সংকট দূরীকরণে হিমাগার মালিকগণের সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
আলোচনায় পাইকারি আলু ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, আমরা আলু ক্রয়ের সময় ক্রয় রশিদ পাই না।
হিমাগার মালিক সৈয়দ আলী বলেন, তাঁর হিমাগারে রক্ষিত ৮৫ শতাংশ আলু মূলত বীজ আলু। অবশিষ্ট আলু তিনি সরকার বেধে দেয়া মূল্যে বিক্রয় করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নীলফামারীর উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, সকল আলু বীজ আলু নাও হতে পারে। হিমাগারে রক্ষিত আলু পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে কোনটি খাবার আলু আর কোনটি বীজ আলু। বীজ হিসেবে ৩৭,৩০৮ মেট্রিক টন আলুর চাহিদা রয়েছে। অবশিষ্ট সব খাবার আলু।
পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে আমরা প্রস্তুত আছি।
-এসআর