ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যদের পরিধেয় কাপড় পরিষ্কার করে চলছে ভূলন বৈদ্যের তিন যুগের জীবিকা। চার সদস্য বিশিষ্ট পরিবারটি চলতো এ কাজের আয় দিয়েই। কিন্তু ইদানীং নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে কাজ কমে যাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। স্ত্রী-সন্তানের আহার যোগাতে করতে হচ্ছে ধার দেনা।
ভূলন বৈদ্য হবিগঞ্জ শহরের টাউন হল রোডে ভাড়া নেওয়া একটি ছোট্ট ঘরে ধোপার কাজ করেন। বুড়ো হাতে ইস্ত্রি ঘষানোর ফাঁকে মিনিট পনেরোর আলাপচারিতায় তিনি নিজ পরিবারে টানাপোড়েনের কথা জানান।
তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম দুই থেইক্যা তিনগুণ বাইরা গেছে। কিন্তু আমরার পরিশ্রমের দাম বাড়ে নাই।
একটি কাপড় ধুয়ে-ইস্ত্রি করে ২০ টাকা নেন ভূলন। শুধু ইস্ত্রির জন্য ১০ টাকা পারিশ্রমিক নেন। এভাবে দৈনিক গড়ে দুই থেকে তিনশ টাকা আয়। অন্যদিকে, প্রতিদিনের পারিবারিক ব্যয় অন্তত ৬০০ টাকা। এ পরিস্থিতিতে তাকে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ টাকা ঋণ করতে হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করে ভূলন বৈদ্য জানান, মানুষের কাপড় ধুয়ে ৩৬ বছর ধরে পরিবার চালানোর পাশাপাশি এক ছেলেকে তিনি মাধ্যমিক পাস করিয়েছেন। আর এখন দিনভর ধোপার কাজ করেও তিন বেলা খাবারের টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারছেন না। প্রতি মাসে বাসা ও দোকান ভাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
একই পেশায় নিয়োজিত দক্ষিণ শ্যামলী এলাকার প্রদীপ বৈদ্য, উত্তর শ্যামলীর সৌরভ বৈদ্য ও পুরান মুন্সেফী এলাকার সুজিত বৈদ্য। তাদের সঙ্গে কথা বলে শুধু হতাশার গল্প শোনা যায়।
সৌরভ বৈদ্য জানান, মাসে দোকান ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা। বিদ্যুৎ বিল ও কয়লা কেনাসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে মাসিক ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজারে। অপরদিকে, দিনে দুই থেকে তিনশ টাকার বেশি আয় হয় না। এ জন্য সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকে।
প্রদীপ বৈদ্য জানান, বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৭০ টাকা। অন্য আনাজ কেনার সাহসঅই করতাম ফারি না। মোটা চাউল কিনতাছি ৫২-৫৩ টাকা কেজি দিয়া। কাউরে কিছু কইতামও ফারি না, সইতামও ফারি না।
এ চার জন লন্ড্রি সার্ভিস দাতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরে এ পেশায় ৩৫-৪০ জন রয়েছেন। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাদের প্রত্যেককেই বেগ পেতে হচ্ছে। বাংলানিউজ।