ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরটি রপ্তানিমুখী বন্দর হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৭ বছর পর গেল বছরের আগস্টে এ বন্দর দিয়ে পুরোদমে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। তবে এ বছর আবারও স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দরের আমদানি বাণিজ্য। চলতি জুন মাসের প্রথম থেকেই ভারত থেকে কোনো পণ্য আমদানি হচ্ছে না। ১৪ হাজার টন গম আমদানির জন্য খোলা এলসির গমও আসছে না ভারত থেকে।
বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আড়াই থেকে ৩ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের মাছ, রড, সিমেন্ট, এলপি গ্যাস ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের অর্ধেকই হিমায়িত মাছ। এসব পণ্য সরবরাহ করা হয় দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে।
মূলত এ বন্দর দিয়ে মোটর পার্টস, ইলেক্ট্রনিক পণ্য ও প্রসাধনীর মতো উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি না থাকায় ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন না বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। বছরে দু-একবার পণ্য আমদানি হতো।
তবে গত বছরের আগস্ট মাসে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পুরোদমে পণ্য আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। প্রথমে গম এবং এরপর চাল আমদানি করা হয়। সর্বশেষ পেঁয়াজ এবং আদাও এসেছে ভারত থেকে। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমতে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় বাজারগুলোতে পেঁয়াজ যে দামে বিক্রি হয়- শুল্কসহ আমদানি খরচ তার চেয়ে কিছুটা বেশি। সেজন্য পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া ২৫ শতাংশ শুল্কে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য সরকারিভাবে যে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে। ফলে এখন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের ৬২ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে। আর তাই চাল আমদানিও বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
শুল্কমুক্ত হওয়ায় শুধুমাত্র গম আমদানির মাধ্যমেই সচল ছিল স্থলবন্দরের আমদানি বাণিজ্য। তবে গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত সরকার গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে নতুন করে গমও আমদানি হচ্ছে না। গত ৩০ মে পর্যন্ত শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা জারির আগে খোলা এলসির গম এসেছে। তবে এখন গম আমদানি বন্ধের কারণে আমদানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। আর আমদানি না হওয়ায় সরকারও এ বন্দর থেকে রাজস্ব পাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের কারণে ত্রিপুরার সঙ্গে অন্য রাজ্যগুলোর সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেজন্য অন্য রাজ্য থেকে পণ্য আসছে না। এছাড়া যেসব পণ্য এ বন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি আছে, সেগুলোও অন্য রাজ্য থেকে ত্রিপুরায় আসে। এতে করে আমদানি খরচ বেড়ে যায়।
যদিও বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ৭০-৮০ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গত আগস্ট মাসে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৫৩৪ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়। সেপ্টেম্বর মাসে আমদানি হয় ৭৩২ ট্রাক, অক্টোবর মাসে ৬০১ ট্রাক, নভেম্বরে ৬৪৩ ট্রাক, ডিসেম্বরে ২৬৯ ট্রাক, জানুয়ারিতে ৫৮৮ ট্রাক, ফেব্রুয়ারিতে ৩১ ট্রাক, মার্চে ২৭৩ ট্রাক, এপ্রিলে ৩৬৪ ট্রাক এবং মে মাসে ৪৬৪ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। তবে ১ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে কোনো পণ্যই আমদানি হয়নি।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১২ মে গম রপ্তানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই বন্দর দিয়ে গম আমদানি বন্ধ রয়েছে। যেসব পণ্য এ বন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি আছে, সেগুলোর চাহিদা স্থানীয় বাজারগুলোতে খুবই কম। বর্তমানে অন্য কোনো পণ্য আমদানি না হওয়ায় আমদানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, ‘ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার আগে এম আলম গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৪ হাজার টন গম আমদানির জন্য এলসি খুলেছিল। কিন্তু টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ত্রিপুরার সঙ্গে অন্য রাজ্যের সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেসব গমের গাড়ি আসতে পারছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু হলে পুরোনো এলসির গমগুলো আসবে বলে আশা করছি।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই-একটি পণ্য দিয়ে আমদানি বাণিজ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন। কারণ কোনো পণ্যের চাহিদাই সব সময় এক রকম থাকে না। এজন্য আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এ বন্দর দিয়ে নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত সকল পণ্য আমদানির অনুমতি চেয়ে আসছি সরকারের কাছে। কিন্তু সেই অনুমতি আজও মেলেনি। রপ্তানির মতো আমদানি বাণিজ্য চাঙা হলে বন্দরে যেমন আরও কর্মসংস্থান তৈরি হবে, তেমনি সরকারও রাজস্ব পাবে।’