ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো ও শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টির মতো খাতে বরাবরই বাংলাদেশকে অনুদান দিয়ে আসছে বিশ্ব ব্যাংক। এই প্রচলনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এবার উচ্চশিক্ষায় নেওয়া হচ্ছে এক হাজার ৮৪১ কোটি টাকার ঋণ, যা বিশ্ব ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে চড়া সুদসহ। প্রকল্প গ্রহণের সময় অনুদান হিসেবে নেওয়ার কথা বলা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ঋণ হিসেবে।
ইউজিসির প্রস্তাবনায় দেখা যায়, বিশ্ব ব্যাংক ঋণে ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ শীর্ষক এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ ও নারী নেতৃত্বের সক্ষমতা বাড়ানো প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বিভাগ থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় চার হাজার ৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন দুই হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। বাকি এক হাজার ৮৪১ কোটি টাকা নেওয়া হবে ঋণ হিসেবে।
সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের (এসডিআর) মুদ্রায় এ ঋণ নেওয়া হবে। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরের মধ্যে। তবে ঋণের ওপর বার্ষিক পরিশোধ করতে হবে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং এক দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ।
ঋণ হিসেবে অর্থ নেওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘সব সময় অনুদান নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমরা আগে অনুদান নিয়েছি, এখন ঋণ নেবো। বিশ্ব ব্যাংক থেকে পাওয়া অর্থ ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে, যা বাংলাদেশকে সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।’
এ ধরনের প্রকল্পে ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘অনুদান হোক কিংবা ঋণ, উচ্চশিক্ষায় আরও বিনিয়োগ দরকার। উচ্চশিক্ষা আরও ভালো হওয়া উচিত। ঋণ-অনুদান যাই হোক প্রকল্প দরকার। শিক্ষা-টেকনোলজিতে আরও বিনিয়োগ হওয়া উচিত।’
অনুদানের বদলে কেন ঋণ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো জানি না।’
অনুদান বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইউজিসির আরেক সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘এটা ইআরডি বলতে পারবে, আমরা কিছু বলতে পারবো না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তার অর্থ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনসহ প্রকল্পের আওতাভুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের একজন প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পে অর্থের সংস্থান বিষয়ক পূর্বানুমোদন গ্রহণের আবেদন করা হলে প্রস্তাবের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় দ্বিপাক্ষিক/বহুপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনসহ অন্য শর্ত দিয়ে অনুমোদন হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের ঋণসহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে ইআরডির এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ব ব্যাংক থেকে ১৯ দশমিক ১ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২৫ মে নেগোসিয়েশন মিটিং হয়। ২০২১ সালের ২৪ জুন বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড সভা ঋণ অনুমোদন করে। বোর্ডের অনুমোদনের ১৮ মাসের মধ্যে চুক্তি সইয়ের বাধ্যবাধকতা আছে। তবে ইআরডি থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণচুক্তি করার সময় ৩১ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে অর্থাৎ, এর মধ্যে প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন প্রয়োজন। বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টসহ ইআরডির পত্রসমূহ ডিপিপিতে সংযুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশনা হয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ পাঁচ বছর ছয় মাস। অর্থাৎ, ৬৮ মাস ধরে সব খাতের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৪২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়িভাড়া করে অস্থায়ী ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি (ইউটিটিএ) স্থাপনসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৩২৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগ এ ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করতে বলেছে।
প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় একটি একাডেমিক কমপ্লেক্স, নারীদের জন্য ডরমিটরি নির্মাণসহ আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণে প্রায় ৩২২ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ভবনগুলোর প্ল্যান ও ড্রয়িং-ডিজাইনসহ বিদ্যমান গণপূর্তের রেট শিডিউল-২০২২ অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যয় বিবরণ ডিপিপিতে সংযুক্ত করার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন থেকে মতামত ব্যক্ত করা হয়।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় কতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে তা যাচাই করে প্রকৃত সংখ্যা, বিস্তারিত বিবরণ ও গণপূর্তের রেট শিডিউল-২০২২ অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যয় প্রাক্কলন ডিপিপিতে সংযুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।