ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের আশার বাণী শুনিয়ে ছিলেন। এর প্রতিফলনে রোববার (২৯ মে) দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। এতে একদিনেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন আট হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। আর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে ১৩১ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এদিন শেয়ারবাজার লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। শেয়ারবাজার খুলতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে। ফলে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান। এমনকি এক ডজন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
এর আগে আট কার্যদিবসের টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৫৫৫ পয়েন্ট কমে গেলে গত রোববার (২২ মে) মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। বিএসইসি থেকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাসকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে শেয়ারবাজার ভালো করতে দিক নির্দেশনা দেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় ২৩ মে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক একদিনেই ১১৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সূচকের এমন উত্থানের পর পরই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএসইসি।
বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে এখন থেকে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ড বাদে অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাট অব ডেটে পুঁজিবাজারে কমপক্ষে তিন কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। আগে যেটা ছিল এক কোটি টাকা।
একইভাবে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে আগে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটাকে বাড়িয়ে করা হয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কমিশন সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিএসইসি।
তারল্য বাড়াতে বিএসইসি এমন পদক্ষেপ নিলেও ২৪ ও ২৫ মে শেয়ারবাজারে ফের দরপতন হয়। এ পরিস্থিতিতে সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন আনে বিএসইসি। সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়মের কারণে এখন থেকে একদিনে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম দুই শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
বিএসইরস এই পদক্ষের পরও বৃহস্পতিবার (২৬ মে) লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। এতে শেষ ঘণ্টার লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ওই দিন সূচকের বড় উত্থান হয়।
এরপর রাতে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) আয়োজিত সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের বিষয়টি জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে বড় কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে বহির্বিশ্বের কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। এটা সমায়িক। আপনারা (বিনিয়োগকারীরা) ভয় পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, সবাই আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। শেয়ারবাজার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। আশা করি আগামী সপ্তাহে শেয়ারবাজার ভালো কিছু হবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের এমন আশার বাণী শোনানোর পর রোববার সূচকের বড় উত্থান দেখতে পেলেন বিনিয়োগকারীরা। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩১ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৩৬৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫টির। আর ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের তুলনায় আট হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেড়ে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকায় উঠে এসেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৯৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজারে এমন ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মেলায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে তারা শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার ধারাবাহিকতা দেখতে চান।
এদিকে, বড় উত্থানের দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩২ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জিএসপি ফাইন্যান্স, আরডি ফুড, ফরচুন সুজ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, এসিআই ফরমুলেশন, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং এবং শাহিনপুকুর সিরামিক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৬৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৭২ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৭৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪টির এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।