ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: কর বাড়ানো ও নির্ধারিত সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের লক্ষ্য পূরণ করতে সরকারকে ১০টি পদ্ধতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে তারা ঋণের অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে।
এ বিষয়ে আইএমএফের কর্মকর্তারা আটটি প্রশ্ন রেখেছেন। আগামী অক্টোবরে দ্বিতীয় রিভিউয়ের (পর্যবেক্ষণ) অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে এ মিশন। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের স্টাফ মিশন প্রতিনিধি দল প্রথমবারের মতো সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শুরু করে এসব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। এর আগে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণে ছোট-বড় ৩৮টির মতো শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
সূত্রে জানা গেছে, আইএএফের প্রতিনিধিদলের এ সফর একটি নিয়মিত কাজ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। চুক্তি অনুসারে সদস্য দেশগুলোতে তারা প্রতি বছরই এমন সফর করেন। এতে শর্তের কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকলে তা দূর করতে পরামর্শ দেওয়ার দায়িত্ব এ টিমের। আগামী অক্টোবরে দ্বিতীয় পর্যালোচনার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পহেলা নভেম্বর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ছাড় করবে আইএমএফ। যে কারণে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শর্ত অনুসারে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশকে।
আইএমএফ’র আটটি প্রশ্ন হলো: ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় আটটি প্রশ্ন রেখেছে আইএমএফের প্রতিনিধিরা। যেগুলো হলো- বাজেট বাস্তবায়নে অগ্রগতি কেমন? সংশোধিত বাজেটের ফল কী? আগামী বাজেটে পরিকল্পনা কি? কী পরিমাণ ভর্তুকি বাড়ানো হবে পরবর্তী বাজেটে? সুদ পরিশোধের জন্য কত বরাদ্দ থাকছে? কোথা থেকে ঋণ পাওয়া যাবে? পরিচালনা ব্যয় কত? কোথায় কীভাবে পরিচালনা ব্যয় বাড়বে?
এসব প্রশ্নের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে উত্তর দিয়েছেন। তবে তাদের উত্তরে প্রতিনিধি দল কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মিশন শেষে তারা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে যাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী আগামী জুনে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ দুই কোটি ৪৪ লাখ ডলারে উন্নীত করা চ্যালেঞ্জিং হবে। দুই কোটি ৩০ লাখ ডলার করতে পারলেও কনসিডার করবে আইএমএফ। তবে তার থেকে কম হলে তাদের কনসিডার পাওয়া যাবে না।
এদিকে, আগামী অর্থবছর এনবিআরের আয় বাড়ানোর জন্য ১০টি পদ্ধতি দেবে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ পদ্ধতিতে কি করে আয় বাড়ানো যাবে; তা ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করা হবে এনবিআরের সঙ্গে বুধবারের বৈঠকে।
প্রসঙ্গত, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে আয় বাড়াতে হবে জিডিপির ০.৫ শতাংশ হারে। এর পরের অর্থবছরে এ হারে বাড়াতে হবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাড়াতে হবে ০.৭ শতাংশ। জুনের মধ্যে জুনের মধ্যে ০.৫ শতাংশ আয় বাড়লে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এনবিআরের আয় হয়েছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল তিন হাজার ১১৮ কোটি ডলার। ঈদের আগে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ দুই হাজার কোটি ডলারের কিছুটা বেশি ছিল। ফলে দুই হাজার কোটি থেকে আগামী জুনের মধ্যে তা দুই হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। আয় বাড়াতে যেমনটা হবে আগামী অর্থবছরে এনবিআরের জন্য।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জুনের মধ্যে রিজার্ভের শর্ত পূরণ করতে না পারলেও আগামী সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ৫৩১ কোটি ডলারের ফ্লোর অবশ্যই পূরণ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। প্রথম রিভিউয়ে আইএমএফ দেখবে বাংলাদেশ শর্ত পূরণের জন্য আগামী বাজেটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না। কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুর্বলতা থাকলে তা দূর করতে পরামর্শ দেবে আইএমএফ।