ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় সরকারের ব্যয় বেড়ে গেছে। যেভাবে ব্যয় বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি। ফলে সরকারকে চলতি ব্যয় মেটাতে ঋণের দিকে নজর বাড়াতে হচ্ছে।
তারল্য কম থাকায় সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে গেছে। ১ থেকে ১৫ নভেম্বর এই ১৫ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
গত বছরের একই সময়ে ঋণ নিয়েছিল ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ঋণ বেড়েছে ৮৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আয় বেড়েছিল ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আয় বৃদ্ধির হার কমেছে ২ শতাংশ। অথচ এর বিপরীতে ব্যয় বেড়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে।
গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে ১১৬ শতাংশ, সার আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২২২ শতাংশ। দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তায় ব্যয় বেড়েছে ২৮৮ শতাংশ।
এছাড়া সরকারিভাবে চড়া দামে চাল, গম, চিনি আমদানি করতে হচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্পে জরুরি পণ্য আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। এসব বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে সরকারকে বেশি মাত্রায় ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ছিল প্রায় ২২ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকায়।
অথচ গত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন কোনো ঋণ নেয়নি। উলটো আগের নেওয়া ঋণ থেকে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল।
গত বছরের ১ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছিল ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছে ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৮৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের অর্থে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছে। ফলে সার্বিকভাবে সরকারের ঋণ কিছুটা কমেছে। ওই সময়ে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সরকারের ঋণ বেড়েছে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বেশি মাত্রায় সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যেতে পারে, এ কারণে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের কারণে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে। এতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মূলত মূল্যস্ফীতির হার কমানোর জন্যই সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ নেওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে। গত আগস্টে এ হার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। পরে তা কমে গত অক্টোবরে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ হয়েছে।
নন-ব্যাংকিং খাত বা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নেওয়া গত সেপ্টেম্বরে ১২২ শতাংশ কমেছে। গত বছরের ওই মাসে নিট হিসাবে ৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকার।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার গত অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিট ঋণ নিয়েছিল ৪৪ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছে ২৬ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এ খাতে ঋণ কমেছে ৪০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার নীতিমালা কঠোর করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও আয় কমার কারণে মানুষ জীবিকা নির্বাহের ব্যয় মেটাতে গিয়ে নতুন সঞ্চয় করতে পারছে না। বরং আগের সঞ্চয় ভেঙে সংসারের ব্যয় মেটাচ্ছেন।