নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারা, অর্জন করতে পারেননি লক্ষ্যমাত্রা। আরো নানা অদক্ষতায় চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের পাশে দাঁড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনাকালের দোহাই দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের চাকরি রক্ষায় ব্যাংকগুলোর প্রতি সার্কুলার জারি করেছে। এরই মধ্যে ব্যর্থতার অভিযোগে যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের পুনর্বহালও করতে বলা হয়েছে একই সার্কুলারে। এতে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকগুলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অদক্ষ কর্মীদের পুনর্নিয়োগ করা হলে দক্ষকর্মীরা কাজে নিরুৎসাহিত হবেন। তারা বলবেন, দক্ষ আর অদক্ষের যদি একই পরিণতি, একই মূল্যায়ন, তাহলে কাজ কেন করব? সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর জনবল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির সার্কুলার বাস্তবায়ন করা হলে। তাই সার্কুলারের কারণে উভয় সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারটির কিছু বিষয় চলমান শ্রম আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। কারণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রম আইনে যেমন কর্মীর স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে, তেমনি নিয়োগকর্তার হাতেও প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। অথচ জারিকৃত সার্কুলার মানতে গেলে নিয়োগকর্তা অধীনস্থ অযোগ্য কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারবে না।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোভিডকালীন শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণ প্রদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত বা অথবা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না। এর মাধ্যমে অযোগ্য, অদক্ষ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ক্ষমতাই আর থাকছে না ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হাতে।
সার্কুলার অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনাকাল হিসেবে ‘১ এপ্রিল ২০২০ সাল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১’ এই সময়কাল বুঝিয়েছে।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির সঙ্গে একমত ব্যাংকগুলি। তবে অদক্ষ বা অযোগ্য ব্যাংকারদের চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়া বা চাকরিচ্যুত না করার নির্দেশনার সমালোচনা করছেন প্রায় সবাই।
এ বিষয়ে নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বড় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার বাস্তবায়ন করা হলে ‘কাজ না করে বেতন নেওয়ার’ প্রবণতা উৎসাহ পাবে। অন্যদিকে ব্যাংকের চেইন অব কমান্ডও ভেঙে পড়ার ঝুঁকি আছে। অদক্ষ বা অযোগ্য কেউ সার্কুলার অনুযায়ী চাকরি ফিরে পেলে, তিনি আর ঊর্ধ্বতনকে মানতে চাইবেন না। এতে একটি ব্যাংক পরিচালনার যে শৃঙ্খলা-কাঠামো, তা ভেঙে পড়বে।
এদিকে শ্রম আইনে (২০০৬) যেমন কর্মচারী চাকরি ছাড়তে পারবেন, এই সুযোগ রাখা হয়েছে, আবার মালিকও যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে কর্মচারী ছাঁটাইয়ের অধিকার রাখেন বলে বলা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে করোনাকালে ‘চাকরিচ্যুতি’ সম্পূর্ণ বারণ করা হয়েছে, যা শ্রম আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার মেনে চলতে হলে প্রযোজ্য আইনের ব্যত্যয় ঘটবে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হবে, যার ফলাফল হবে নেতিবাচক।
বেশকিছু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চাকরিচ্যুত কর্মীদের আবার ফেরানো হলে ব্যাংকগুলোর মানবসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে। যাদের পুর্নবহাল করা হবে তাদের উদ্ধত আচরণে পুরো পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।