ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তবুও বাড়ছে না কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। এক দশক ধরেই চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কোরবানিদাতারা। আসন্ন কোরবানির ঈদেও চামড়ার দামে কোন সুখবর নেই বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারি মালিক ও আশপাশে গড়ে ওঠা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা যায়।
তাদের দাবি, চামড়ায় ব্যবহৃত প্রায় সব ধরনের কেমিক্যালের (রাসায়নিক) দাম বাড়ার পাশাপাশি লবণের দামও বেড়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ বাড়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কাঁচা চামড়ার দামে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও দেশের চামড়ার বাজার শুধু চীনকেন্দ্রিক হওয়ায় সেই সুফলও পাবেন না বিক্রেতারা। অর্থাৎ দাম বাড়বে না। সবমিলে চামড়া আগের মতো বিক্রি হবে পড়তি দরেই।
তাজিন লেদার কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম বেড়েছে কিছুটা। সে সুবিধা ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারলে পাওয়া যেত। কিন্তু আমাদের লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় সেখানে রপ্তানি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা শুধু চায়নাকেন্দ্রিক ব্যবসা করছি। যেখানে ইউরোপে প্রতি বর্গফুট চামড়া দুই ডলার ৮০ সেন্ট, সেটা চায়নায় ৯০ সেন্ট থেকে ১ ডলার ২০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে। সে জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা দাম বাড়লেও দেশে সে প্রভাব পড়বে না।
কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চামড়া ফিনিশিং পর্যন্ত ৯২ ধরনের কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়। দেশি-বিদেশি প্রতিটি কেমিক্যালের দাম বেড়েছে। বাড়তি লবণের দামও। যে কারণে প্রতি বর্গফুট চামড়ার প্রক্রিয়াকরণ খরচ ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগে ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে ছিল।
শুভ লেদারের স্বত্বাধিকারী আব্দুল জব্বার সবুজ বলেন, প্রতিটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে গড়ে ৮ কেজি লবণ লাগে। রোজার আগে যে লবণের বস্তা (৬০ কেজি) ৪৫০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৮৭০ টাকা। যে কারণে খরচ অনেক বেড়েছে।
তারা বলছেন, প্রায় এক দশক থেকে চামড়ার দাম কম। এর মধ্যে কয়েক বছর বিক্রি না করতে পেরে চামড়া ফেলে দিয়েছেন কোরবানিদাতারা। অবশ্য গত বছরের চামড়া নষ্ট হয়নি। আড়ত পর্যায়ে তার আগের কয়েক বছরের তুলনায় সামান্য বাড়তি দামও দেখা যায়। এ বছর পরিস্থিতি তেমনই রয়েছে।
জানা যায়, সেখানে শিল্প এলাকার বাইরে গড়ে ওঠা আড়তগুলোতে এখন মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৬শ থেকে ৭শ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় চামড়া ৯শ থেকে ১১শ টাকা। এসব চামড়া কাঁচা অবস্থায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে কেনা, যা পরবর্তী সময়ে লবণ দিয়ে রাখা।
কোরবানির পর মানুষের বাসা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পরে তারা আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন। সাধারণত মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়ার আকার হয় ২৫ বর্গফুট পর্যন্ত। গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় এক হাজার থেকে ১১শ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। ঢাকার বাইরে দাম হওয়ার কথা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ঢাকায় ৭০০ টাকা ও বাইরে ৫০০ টাকার বেশি দাম মেলেনি।
তবে এবার চামড়ার দাম কিছুটা বাড়বে বলে আশা করছে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাঁচা চামড়ার গুণগত মান ঠিক রাখা, লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় সংগঠনের সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, এবার চামড়ার দাম একটু বাড়বে। যদি লবণ ব্যবসায়ীরা কোন সংকট তৈরি না করেন।