করোনা-পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতিতে ধাক্কা লেগেছে ডলারের ঊর্ধ্বমূল্যে। বাজারে এখন নগদ ডলারের তীব্র সংকট। এ কারণে প্রতিদিন বাড়ছে ডলারের দর। কিছু কিছু ব্যাংক ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছে না। বাইরে নগদ ডলার বিক্রি করছে না। সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। এর পরও দাম ধরে রাখা যাচ্ছে না।
কয়েক দিন ধরেই ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকার ওপরে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এ কারণে ডলারের দর বাড়ছে। তবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। করোনার পর ব্যবসায় কার্যক্রম গতিশীল হওয়ার পর থেকেই ডলারের চাহিদা বেড়ে চলেছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বেড়েছে। রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেড়েছে অনেক। অন্যদিকে গত কয়েক বছরে দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রতি মাসেই বাড়ছিল। আগের রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে জুন পর্যন্ত। জুনের পরই রেমিট্যান্সের হার কমতে থাকে। গত তিন মাসের গড় রেমিট্যান্সের পরিমাণ নেমেছে ১৮০ মিলিয়ন ডলারে। গত তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৬০ মিলিয়ন ডলার। তার আগের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এসেছে ৭১৭ মিলিয়ন ডলার। তিন মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৫৭ মিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কনটেইনার ভাড়াও বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। এ কারণে ব্যবসায়ীদের ডলারের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। দেশে সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় বিদেশে যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে সরবরাহ কম হওয়ায় চরম সংকট তৈরি হয়েছে ডলার মার্কেটে। চলতি সপ্তাহে বেশির ভাগ ব্যাংকে ডলারের দাম ছিল ৮৯ থেকে ৯১ টাকা। গত বুধবার সোনালী ব্যাংকে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৯ টাকা, জনতা ব্যাংকে ৮৮ টাকা আর অগ্রণী ব্যাংকে ৮৮ টাকা ২০ পয়সা। গ্রাহকের কাছে নগদ অর্থে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকার বেশি দরে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও দেখা গেছে ৮৯ থেকে ৯১ টাকা দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার সংকটের কারণে এলসি বন্ধ রাখছে। রপ্তানি বিলও পরিশোধ করতে পারছে না। সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন রিজার্ভ থেকে খোলা বাজারে ডলার সরবরাহ করছে। তবে চাহিদা বেশি থাকায় দর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ২৯ জুলাই প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা পর্যন্ত। আগস্টের পর ডলারের দাম বাড়তে থাকে। সংকটের কারণে আগে যেসব ব্যাংক ডলার বিক্রি করত তারাই এখন কেনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আসছে। জানতে চাইলে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুছ ছালাম আজাদ বলেন, ‘করোনার কারণে দেশের পুরো উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। হঠাৎ সব ধরনের ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও আমদানি ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। রপ্তানির জন্য বিপুল পরিমাণ ব্যাক টু ব্যাক এলসি আছে। এগুলো সেটেলমেন্ট হতে অনেক সময় লাগবে। এ সময়ের মধ্যে ঘাটতিও তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স কমছে। ডলারের মূল উৎসগুলো আমাদের কিছুটা ঘাটতিতে পড়েছে। বিমান চালু হয়েছে। প্রচুর মানুষ বিদেশে যাচ্ছে, সঙ্গে ডলার নিয়ে যাচ্ছে। যা গত প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল। এ কারণে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। তবে দ্রুত সংকট কেটে যাবে বলে মনে করি।’ অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, ‘বৈদেশিক পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। মোট হিসাবে বাড়লেও রপ্তানি আমদানির তুলনায় বাড়ছে না, প্রবাসী আয় প্রতি মাসেই কমছে। এজন্য ডলারের দাম বাড়ছে। তবে বর্তমান সংকট পজিটিভ। কারণ এখন প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রপ্তানি হবে। হঠাৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে। এর একটি বেনিফিট আমরা দ্রুত পাব। তখন ডলারের সংকটও কেটে যাবে।’