ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ডলার বাজারে স্বাভাবিকতা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে নতুন করে এলসি খোলা কিছুটা কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ এখনও বাড়ছে। আবার বাড়তে থাকা রেমিট্যান্স ও রপ্তানি সেপ্টেম্বরে কমেছে। এর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক বাংলাদেশি ব্যাংকের ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করছে বিভিন্ন সংস্থা। সব মিলিয়ে ডলার বাজারে সংকট যেন কাটছে না। বাজার সামলাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার মতো উঠে এসেছে। গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ওঠা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। বেশিরভাগ পণ্যের দর বৃদ্ধির ফলে এমনিতেই বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা বাড়তির দিকে। গত আগস্টের বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৪৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। একদিকে ডলার বিক্রির বিপরীতে টাকা উঠে যাওয়া, আরেক দিকে বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা বৃদ্ধির ফলে গত আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য নেমেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়। গত বছরের আগস্ট শেষে যা ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা ছিল।
ব্যাংকাররা জানান, সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো অনেক বেশি দর দিয়ে ডলার কিনছিল। গত আগস্টে রেমিট্যান্সে ডলারের দর ১১৪ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এভাবে দর বৃদ্ধি ঠেকাতে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলারের এক দর কার্যকরে চেষ্টা করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলারের দর বেঁধে দিয়েছে ৯৯ টাকা। আর বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনতে পারবে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলার কেনার গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিতে ডলারের দর নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। মূলত ডলার কেনার খরচ কমানোর মাধ্যমে আমদানি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। আমদানিতে ব্যাংকভেদে গ্রাহকদের ভিন্ন ভিন্ন দরে ডলার কিনতে হচ্ছে।
ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংক আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৬০ পয়সা। সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ১০৬ টাকা ৩৪ পয়সা, জনতা ব্যাংক ১০৪ টাকা ২০ পয়সা। একই দিন বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংকে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ১০৫ টাকা ১০ পয়সা, ঢাকা ব্যাংকে ১০৪ টাকা ৫৯ পয়সা, ইস্টার্ন ব্যাংকে ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা, ব্র্যাক ১০২ টাকা ৫৫ পয়সা। এভাবে দরের ভিন্নতার কারণে একই পণ্য আমদানিতে ব্যাংকভেদে ভিন্ন দর পড়ছে। আবার আন্তঃব্যাংকে ডলার বেচাকেনাও হচ্ছে একেক রকম দরে। মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়। এর আগে সাধারণত ব্যাংকগুলো একই রকম দরে ডলার বিক্রি করত। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করত সেটিকে আন্তঃব্যাংক দর হিসেবে বিবেচনা করা হতো।