দেশের অন্য সব সরকারি চাকরিজীবীর মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। তবে এ কার্যক্রমে তথ্য বিভ্রাটের কারণে অনেক শিক্ষকের বেতন আটকা পড়েছে ।
জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর থেকে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চলতি বছরের মার্চ হতে অনলাইনে দাখিল এবং নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে ইএইফটির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে।
গত ১৫ মার্চ আইবাস প্লাস প্লাস থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষক সংখ্যা ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষক নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের বিপরীতে বেতন নির্ধারণ না করায় সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসের সহায়তায় তাদের তথ্য সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে। অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে গত ৭ মার্চ চিঠি দিয়ে হিসাব মহানিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে সহায়তা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
বাকি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষকের মধ্যে আইবাসের এমপ্লয়ি ডাটাবেজে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৭ জন শিক্ষকের তথ্য এন্ট্রি হয়েছে, যাদের মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৪ জন শিক্ষকের তথ্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা-থানা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়েছে। এন্ট্রি করা ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন শিক্ষকের তথ্য অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। বাকি ৮ হাজার ৪২২ জন শিক্ষকের তথ্য এখন পর্যন্ত ডাটাবেজে এন্ট্রি হয়নি। অনুমোদন পাওয়া ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৫২ জন শিক্ষকের ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে দেয়া হয়েছে এবং ৬৯ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতার ইএফটি আদেশ এখনও অপেক্ষমাণ রয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ৩ হাজার ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো গেজেট-প্রজ্ঞাপন-বিজ্ঞপ্তি না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের নাম আইবাস প্লাস প্লাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পেতে জটিলতার সম্মুখীন হবেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে পাঠানোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি অনুরোধপত্র পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, ৮১ হাজার ৮১৭ জন শিক্ষক যাদের বেতন নির্ধারণ নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের বিপরীতে না হয়ে ‘বিদ্যালয়সমূহ’ গ্রুপে এন্ট্রি হয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসের সহায়তায় তাদের তথ্য সংশোধন করে তার নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ভিত্তিক এন্ট্রি করা প্রয়োজন। এমপ্লয়ি ডাটাবেজে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন শিক্ষকের তথ্য অনুমোদনের ব্যবস্থা করা, ৮ হাজার ৪২২ জন শিক্ষক যাদের তথ্য এখন পর্যন্ত ডাটাবেজে এন্ট্রি হয়নি, সংশ্লিষ্ট উপজেলা-থানা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তাদের তথ্য এন্ট্রির ব্যবস্থা করা, ৬৯ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষক যারা ইএফটি ট্রান্সমিটের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে, সেই সব শিক্ষকের ইএফটির ব্যবস্থা করা।
এছাড়াও যেসব বিদ্যালয়ের নাম আইবাস প্লাস প্লাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি তাদের সেসব নামের তালিকা গেজেট-প্রজ্ঞাপন-বিজ্ঞপ্তিসহ পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বেতন-ভাতা আটকে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামসুদ্দিন মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন পরিশোধে ইএফটি পদ্ধতি অনেক জেলায় চালু হয়েছে। তথ্য বিভ্রাটসহ নানান জটিলতায় অনেক শিক্ষকের বেতন আটকে আছে, যে উপজেলায় যে মাসে ইএফটি চালু হয়েছে তাদেরই আটকে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি। এটার সমাধান করতে হলে হিসাবরক্ষণ অফিসগুলোর উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে এনআইডি সমস্যার কারণে বড় অসুবিধা হয়েছে। ২০১৫ সালে এনআইডিতে আমাদের জন্মসাল ছিল এক রকম, পরবর্তীতে সার্টিফিকেটের সঙ্গে এনআইডি সংশোধন করতে গিয়ে জন্ম তারিখ আবার পরিবর্তন হয়েছে। এই দুইটি তথ্য এন্ট্রি করার কারণে অনেকের বেতন আটকে গেছে। অনেকের নামে সমস্যা আছে, অনেক বিদ্যালয়ের নাম গেজেটে আসেনি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা জোনাল অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা যেসব কাগজ চেয়েছে আমরা দিয়েছি। কিন্তু আদৌ তারা সেটি সমাধান করতে পারবে কি-না এটা আমরা নিশ্চিত না। অনেকের ডিসেম্বর থেকে তিন-চার মাস বেতন হয়নি। অনেক উপজেলায় ইএফটি হয়নি তাদের বেতন আটকায়নি কিন্তু ইএফটি হয়ে গেলে বেতন আটকে যাবে। কারণ তখন ম্যানুয়ালি বেতন হবে না।