দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) হামজা টেক্সটাইল লিমিটেডে (এইচটিএল) ২২ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৯৪ কোটি টাকা।
হামজা টেক্সটাইল লিমিটেড দুলাল ব্রার্দাস লিমিটেড (ডিবিএল) গ্রুপের একটি ডায়িং ও ফিনিশিং কোম্পানি। এই অর্থায়ন ভোক্তাদের পরিবর্তনশীল চাহিদা মেটাতে অগ্রসর ও সম্পদ-সাশ্রয়ী প্রযুক্তিসহ একটি নতুন কারখানা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে, যেখানে ৯ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) আইএফসির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএফসি জানায়, নতুন এই বিনিয়োগ তৈরি পোশাক খাতে আইএফসির প্রথম করোনা সহায়তা এবং নিম্ন-আয়ের ও ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলোর বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) প্রাইভেট সেক্টর উইন্ডোর (আইডিএ-পিএসডব্লিউ) অর্থায়নের অন্তর্ভুক্ত।
এ বিষয়ে ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, নতুন এই কারখানা ক্রেতাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে হামজা টেক্সটাইলসকে নতুন ফেব্রিক নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেবে। এর উৎপাদন ভিত্তি সম্প্রসারণ করবে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে অগ্রসর প্রযুক্তির কার্যকারিতা তুলে ধরবে এবং একই সঙ্গে জলবায়ুজনিত সুবিধা দেবে।’
সম্প্রসারিত এই কার্যক্রমের ফলে ২০২৮ সাল নাগাদ স্থানীয় সরবরাহ চেইনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতিতে ৮ মিলিয়ন ডলারের অবদান আশা করা হচ্ছে। এছাড়া কর্মীদের অতিরিক্ত আয় ও পুরো সরবরাহ চেইনে সংযুক্ত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ১৫ মিলিয়ন ডলারের অবদান রাখবে।
হামজা টেক্সটাইলস লিমিটেড দেশের অন্যতম বৃহৎ সমন্বিত তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে ব্যবহারের জন্য ডায়িং ও ফিনিশিং সেবা দেয়। আইএফসির বিনিয়োগ হামজা টেক্সটাইলসের দৈনিক ফিনিশিং সক্ষমতা ৮০ টন বাড়াবে এবং নতুন কারখানার কারণে মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে দৈনিক ১০৩ টন। কারখানাটি হবে লিডারশীপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) সনদপ্রাপ্ত।
আইএফসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেক্টর গোমেজ আং বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এ দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা পূরণে এ শিল্প সহায়তা করছে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে এই শিল্প উচ্চ মূল্য সংযোজিত পণ্যের দিকে যাচ্ছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করছে, যা কোভিড-১৯ এর প্রভাব বিবেচনায় আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।’
আইএফসি এ দেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে জোরালো সমর্থন আদায় ও অর্থায়ন করে আসছে। দেশের রফতানি আয়ের পাঁচ ভাগের চার ভাগই আসছে তৈরি পোশাক থেকে। এই খাত ৪০ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, যার বেশিরভাগই নারী। তবে রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে নিম্ন-মূল্যের পোশাক থেকে। উৎপাদন ও এর প্রক্রিয়াগত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এই খাতে মূল্য সংযোজন বাড়াবে এবং উন্নত উৎপাদন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে, যা অর্থনীতিকে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবিলা করতে ও রফতানি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
আইএফসি এ পর্যন্ত দেশের পাঁচটি তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ৯০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। যার অধিকাংশই ঋণ আকারে দেওয়া হয়েছে। ডিবিএল গ্রুপের সঙ্গে সর্বশেষ এই উদ্যোগ আইএফসির জন্য এই খাতে সর্বশেষ বিনিয়োগ। ২০১৩ সালে আইএফসি এই গ্রুপের আরেকটি ডায়িং ও ফিনিশিং কোম্পানি কালার সিটি লিমিটেডকে ১০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করে।
২০১০ সাল থেকে হামজা টেক্সটাইলস ও ডিবিএল গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিতে সম্পদের কার্যকর ব্যবহার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু সহনশীলতার জন্য নানা কর্মসূচিতে পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছে আইএফসি। এর মধ্যে রয়েছে আইএফসির নেতৃত্বে পরিচালিত পার্টনারশিপ ফর ক্লিনার টেক্সটাইলস কর্মসূচি, যা পানি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করে। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড রিটার্নস (জিইএআর) কর্মসূচি এবং আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ‘বেটার ওয়ার্ক’ এর উদ্যোগ, যা শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে এবং শ্রম পরিস্থিতি ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সহায়তা করছে। হামজা টেক্সটাইলস বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে আইএফসির কর্পোরেট সুশাসন সংক্রান্ত পরামর্শ সেবা পাবে।
পারিবারিক ভিত্তিতে পরিচালিত ডিবিএল গ্রুপে কোম্পানির সংখ্যা ২৮টি। ডিবিএল গ্রুপ ১৯৯১ সালে তৈরি পোশাক খাতে কার্যক্রম শুরু করে এবং পরবর্তীতে সিরামিক টাইলস উৎপাদন, নদী খনন, টেলিযোগাযোগ এবং সেমিকন্ডাক্টরস উৎপাদনসহ অন্যান্য শিল্পে আগ্রহ দেখায়।