ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রেক্ষাপট। এরই মধ্যে পিছিয়ে পড়া বরিশালের বিভিন্ন স্থানে শিল্পকল-কারখানাসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্যে জমি ক্রয়সহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর অর্থনীতির পথ পাল্টে যাবে। কমে যাবে বেকারত্বের হার।
পাশাপাশি ব্যবসার জন্য ভালো পরিবেশ সৃষ্টি হলে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত কাঁচামালসহ পণ্যের প্রসার ঘটাতে কৃষি ও পরিবেশবান্ধব কল-কারখানা স্থাপনের দাবি রয়েছে কৃষক সমাজের।
জানা গেছে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের পাশ ধরে এবং বরিশাল, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীসহ বিভাগের ছয় জেলার বিসিক নগরীগুলো কেন্দ্র করে এরইমধ্যে জায়গা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ছোট-বড় উদ্যোক্তারা।
বরিশাল বিসিক সূত্রে জানা গেছে, গোটা বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার আগে কোন পোশাক কারখানা ছিল না। তবে পদ্মা সেতুকে ঘিরে বরিশালে পোশাক কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়েছেন অনেক শিল্প মালিকরা। এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো পোশাক তৈরির কারাখানা স্থাপন হয়েছে বিভাগীয় শহর বরিশালে। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গার্মেন্সটির অবকাঠামো তৈরির পর এখন চলছে মেশিন স্থাপনের কাজ।
নেমর্যাক ডিজাইন গার্মেন্টস নামের পোশাক কারখানাটি চালু হলে, এটিই হবে বরিশালের প্রথম পোশাক তৈরির কারখানা। যেখানে প্রায় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
নেমর্যাক ডিজাইন গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী তৌহিদুল ইসলাম জানান, চলতি বছরেই উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পোশাকের এই কারখানাটি ছাড়াও বরিশাল বিসিকে গড়ে উঠছে কম্বলসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র ও কমফোর্টারের কারখানা। এ কারখানাটিরও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে, এখন মেশিনের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
বিএনসি হোম টেক্সটাইল লিমিটেড নামে কারখানাটির স্বত্বাধিকারী খায়রুল হাসান জানান, কারখানাটি উৎপাদনে গেলে এখান থেকে বিদেশে কমফোর্টার রপ্তানি করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে তাদের।
এছাড়াও বরিশাল, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী জেলার বিসিক নগরে নতুন নতুন শিল্প কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
বরিশাল বিসিকি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম খান বলেন,পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তিন মাস যেতে না যেতেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে বরিশালের অর্থনীতি। শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন উদ্যোক্তারা।
ভোলার গ্যাস বরিশাল আনা হলে বিসিক আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বরিশালের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জালিস মাহমুদ। তিনি জানান, সম্প্রতি বিসিকে ৭৪ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৭ একর নিচু জমি ভরাট করে ১১০টি প্লট করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ৩০টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
একইভাবে ঝালকাঠি, পটুয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বিসিক নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রমও এগিয়ে চলেছে।
কৃষি উদ্যোক্তা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, নদী বেস্টিত বরিশাল বিভাগে মৎস্য পেশার পাশাপাশি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত লাখো মানুষ। সেই হিসেবে কৃষিজাত অনেক পণ্যই এখানকার মূল কাঁচামাল হতে পারে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর নির্ভর করে শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে সেসব পণ্যের কদর বাড়বে, কৃষকও ন্যায্যমূল্য পাবেন। যেমন পেয়ারার জন্য বিখ্যাত বরিশাল অঞ্চলেই হতে পারে জ্যাম-জেলির কারখানা। এতে করে এই সেক্টরের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।