শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। শীতকালীন সবজিতে ছেয়ে আছে বিভিন্ন মাঠ। আমদানি বেশি হওয়ায় কমেছে সবজির দাম। দাম কম হওয়ায় ভোক্তারা সুবিধা পেলেও লোকসান গুনছেন সবজি চাষিরা। চাষিরা প্রতি কেজি বেগুন পাইকারি ৫ টাকা ও শিম ১০ টাকায় বিক্রি করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৫৪০ হেক্টর, রানীনগরে ৮০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৮০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৮০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২৬০ হেক্টর, পত্নীতলায় ২৪৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ৪৭৫ হেক্টর, সাপাহারে ২০ হেক্টর, পোরশায় ৮০ হেক্টর, মান্দায় ৫২০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ২০০ হেক্টর সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শিম ৫২০ হেক্টর, মূলা ১৩০ হেক্টর, বেগুন ২৮০ হেক্টর, ফুলকপি ৮৫ হেক্টর, বাঁধাকপি ৩০ হেক্টর, পালংশাক ১০৫ হেক্টর এবং লালশাক ৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নে শুকুরচাঁনপুর, চকাতিতা, ধুপাইপুর, সোমবাড়ি, বর্ষাইল, মাগুরা ও মল্লিকপুর এবং কীত্তিপুর ইউনিয়নের বাঘাই, জাগেশ্বর ও কীত্তিপুর গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে শোভা পাচ্ছে শিম, বেগুন, আলু, ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি সবজি। চাষিরা শিম তোলা ও কীটনাশক স্প্রে, আলুর ক্ষেত পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সোমবাড়ি হাটে প্রতি কেজি বেগুন পাইকারি ৫-৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ১২-১৫ টাকা পিস ও শিম ১০-১১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোমবাড়ি হাট থেকে নওগাঁ শহরের দূরুত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। শহরের সিও অফিস বাজার ও খুচরা বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা কেজিতে। ফুলকপি প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা, শিম ২০-৪০ টাকা, মূলা ২৫ টাকা কেজি এবং আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বর্ষাইল ইউনিয়নের শুকুরচাঁনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান ও নুর মোহাম্মদ বলেন, প্রতি কেজি শিম ১০-১১ টাকায় পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১২-১৫ টাকা। আলু নতুন বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। প্রথম দিকে শিমে ভালো দাম পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন শিমের ফলন ব্যাপক হওয়ায় দাম কমে গেছে। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জাগেশ্বর গ্রামের বেগুন চাষি সুধাংশু বলেন, ১০ কাঠা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছি। প্রথম দিকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এখন ৫-৬ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আগের তুলনায় এখন বেগুনের ফলন বেশি। আগে বেগুনে লাভ থাকলেও এখন লাভ নেই।
বর্ষাইল ইউনিয়নের সোমবাড়ি হাটের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান ও সোহেল রানা বলেন, সোমবার ছিল সোমবাড়ি হাট। এ হাট ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ মণ বেগুনের আমদানি হয়। প্রতি কেজি বেগুন ৫-৬ টাকা দরে কিনে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। হাটে প্রচুর বেগুন আমদানি হওয়ায় দাম কমেছে।
পাইকারী শিম ব্যবসায়ী মিন্টু। তিনি কুমিল্লা ও ঢাকায় শিম পাঠান। সেখানে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, সোমবাড়ি হাট থেকে প্রতিদিন শিম ও লাউ কেনাকাটা করি। লাল শিম প্রতি কেজি ২২-২৩ টাকা। প্রতি দিন প্রায় ৫০-৬০ মণ শিম ও ২০০-৩০০ পিস লাউ কিনি। প্রতি কেজি সিম বিক্রি হয় ২৮-৩০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ২৫-৩০ টাকায়। সবজির ব্যবসায় লাভ থাকে। আবার লোকসানও হয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম জাতের শাকসবজির ভালো ফলন হয়েছে। করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাষিরা বেশি পরিমাণে শাকসবজির চাষ করেছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর বন্যা ও দুর্যোগ না হওয়ায় কৃষকরা বীজ বপন থেকে শুরু করে চারা সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা করতে পারছে। তেমন কোনো রোগবালাই নেই। বাজারে প্রচুর শাকসবজি উঠায় দাম তুলনামুলক কমেছে। কিছু দিন পর যখন সবজির উৎপাদন কম হবে তখন আবার বাজার বাড়তি হবে।