ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে নভেম্বর মাসে এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি। নভেম্বরে অর্জিত ৫.০৯ বিলিয়ন ডলার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬% বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, নভেম্বরে রপ্তানি আয় ৫.৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এর আগে জুনে মাসিক সর্বোচ্চ আয় ছিল ৪.০৯৮ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবি বলছে, নভেম্বরে অর্জিত ৫.০৯ বিলিয়ন ডলার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬% বেশি।
রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতি এমন এক সময় হল, যখন বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান ক্রেতা পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে।
গত বছরের জুলাই থেকে সংকটে ভোগা বাংলাদেশের অর্থনীতি এই আয়ের মধ্য দিয়ে অনেকটাই সবল হবে।
ইপিবি বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র বলছে, পশ্চিমা ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি অর্ডার পাওয়ায় পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে রপ্তানি আয় এক মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ইউএনবিকে বলেন, গত কয়েক মাসে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমলেও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও দক্ষিণ কোরিয়া, নন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর মতো নতুন রপ্তানি গন্তব্য যুক্ত হওয়ায় নতুন করে এটি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরবরাহ ক্ষমতা ভালো। কাপড়ের দামও হাতের মধ্যেই রয়েছে। এছাড়া শীত ও ক্রিসমাস উদযাপনে অর্ডার আরও বাড়বে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও অন-হোল্ড চালানের শিপমেন্ট পুনরায় শুরু করা ও বৈচিত্র্যকরণের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সব ধরণের ক্রেতাদের জন্য একটি ভাল বিকল্প তৈরি করছে।
ইউরোপীয় বাণিজ্য গবেষক ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ যুক্তিসঙ্গত হারে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পোশাক রপ্তানি করছে, যার চাহিদা ইউরোপের বাজারে কিছুটা বেড়েছে।
ইউরোপে সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। যেখানে মূল্যস্ফীতিতে-বিধ্বস্ত ক্রেতারা সব পণ্যের জন্য উচ্চদাম পরিশোধ করছে।
রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ নিয়মিত পরিধান ও হোম টেক্সটাইল আইটেম তৈরি করে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে রপ্তানিতে প্রাধান্য পায়।
এছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ফল, সবজি, হিমায়িত মাছ, পাট ও চামড়াজাত পণ্য এবং হস্তশিল্পের রপ্তানিও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের আলামত দৃশ্যমান হওয়ায় ইইউ প্লাস দেশ যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি গন্তব্য ক্রমাগত বাড়বে।
ঢাবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ রাজ্জাকের আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ইইউ বাজার বাংলাদেশের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, প্রতিবছর পশ্চিমা দেশগুলোতে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নভেম্বরে সেই ফলাফল দেখতে পাচ্ছি, যেখানে প্রথমবারের মতো রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাবে।