পাহাড়ের একসময়ের প্রধান আবাদ ছিল জুম চাষ। সারাবছর জুম চাষের মাধ্যমে খাদ্যশস্য ফলানোর কাজে ব্যস্ত থাকতো জুমিয়ারা। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ি টিলায় সেই জুমিয়ারা হানিকুইন আনারস চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে। আর জুমিয়াদের হাত ধরেই ‘পাহাড়ের আগাম আনারসের চাহিদা বাড়েছে সমতলে’।
জাগো নিউজের বরাত দিয়ে জানা যায়, স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারদের হাত ধরেই পাহাড়ের আগাম আনারস জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি জেলাগুলোতে ‘হানিকুইন’ জাতের আনারসের চাষ হচ্ছে। পাহাড়ি টিলা ভূমিতে চাষ করা আনারস রসালো ও সুমিষ্ট হওয়ায় এর চাহিদাও অনেক বেশি। মৌসুমে আনারস চাষে যেখানে চাষিদের লোকসান গুণতে হতো সেখানে মৌসুমের বাইরে ‘হানিকুইন’ জাতের আগাম আনারস চাষে বাড়তি লাভের মুখ দেখছে চাষিরা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির আগাম আনরাস চাষিদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
মহালছড়ির মধ্য আদাম এলাকায় পাহাড়ি টিলা ভূমিতে আগাম ১৬ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেছেন চাষি সুলক্ষণ চাকমা। তার লাগানো ১৬ হাজার চারার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার গাছে আগাম ফলন এসেছে। আগাম আনারস রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি।
মৌসুমী আনারস চাষের চেয়ে আগাম আনারস চাষে খরচ বেশি হলেও লোকসানের ভয় থাকে না। আনারসের বাজার দর বেশি থাকায় চাষিরা লাভের মুখও দেখছে। বলেছেন পাহাড়ি কৃষক সুলক্ষণ চাকমা।
তিনি জানান, সমতলের বিভিন্ন জেলায় আগাম আনারসের চাহিদা থাকায় বাজারজাত নিয়েও কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না। স্থানীয় বা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কিনে নিচ্ছে পাহাড়ের আনারস। এবছর তিনি আকার অনুযায়ী প্রতি পিস আনারস ১৪ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলেও জানান।
দাম ভালো পাওয়ায় অনেকেই আগাম আনারস চাষে ঝুঁকছেন জানিয়ে আনারস চাষি রিপন চাকমা বলেন, আগাম ফল আসলে ভালো লাভে বিক্রি করা যায়। সমতলের ভোক্তাদের কাছে পাহাড়ের আগাম আনারসের চাহিদাও ব্যাপক। পাইকররা বাগান থেকে আনারস সংগ্রহ করেন বলে চাষিদের ভোগান্তি অনেকাংশে কম।
মহালছড়ির বিভিন্ন বাগান থেকে আগাম আনারস সংগ্রহ করে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন নোয়াখালীর পাইকারী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার কারণে কম দামে কিনে নিতে পারি। মৌসুমে প্রতি পিস আনারস ৪ থেকে ৫ টাকায় কিনলেও এখন ১৪ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মো: আব্দুল জব্বার বলেন, রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় বরাবরই সমতলের বিভিন্ন জেলায় পাহাড়ের আনারসের চাহিদা বেশি। তবে আগাম আনারস হওয়ায় মৌসুমের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও চাহিদা অনেক বেশি। অসময়ে আনারস বাজারে পাওয়ায় দাম নিয়ে মানুষ কোনো চিন্তা করে না। সমতলের মানুষ দামের চেয়ে স্বাদটাকেই বেশি গ্রহণ করে।
আগাম আনারসের চাষ হওয়ায় শ্রমিকরা সারা বছরই আনারস বাগানে কাজ করে জানিয়ে শ্রমিক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগাম আনারসের চাষ বাড়ার সাথে সাথে কর্মসংস্থাননেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমাদেরকে কাজ নিয়ে ভাবতে হয় না। কাজ করে ভালোই চলছে আমাদের সংসার। এতে আমরা অনেক খুশি।
পাহাড়ে উৎপাদিত আগাম আনারস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে জানিয়ে মহালছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল জব্বার জানান, ফলে স্থানীয় কৃষকরা আগাম আনারস চাষে ঝুঁকছেন। আগাম আনারস চাষ পাহাড়ে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।