ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: তালিকাভুক্ত ৭৬ শতাংশ শেয়ারই ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরে। ফ্লোর প্রাইস আরোপের কারণে এসব শেয়ারের এর চেয়ে আর পতন হতে পারে না। তারপরও বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৪ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ২৫টির দর বেড়েছে। দর কমেছে ৮৭টির। অপরিবর্তিত অবস্থায় বা ফ্লোর প্রাইসে ছিল ২৩২টি শেয়ার। ক্রেতার অভাবে ফ্লোর প্রাইসে থাকা ৪৫ শেয়ারের এক টাকারও কেনাবেচা হয়নি।
ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা বেশিরভাগ শেয়ার দর হারানোয় প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৩০৫ পয়েন্টের নিচে নেমেছে। সূচক পতনের হার পৌনে এক শতাংশ। তবে লেনদেনের শুরুতে ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬৩৭৩ পয়েন্ট ছাড়ানোর পর লেনদেন শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে ৬৩০২ পয়েন্টে নেমেছিল। এ হিসাবে লেনদেনের মাঝে সূচকের পতন হয় প্রায় ৭১ পয়েন্ট।
গতকালের দরপতনে ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা শেয়ার সংখ্যা বেড়ে ২৯৬টিতে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই দরপতন রুখতে দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর এটিই সর্বাধিক। গতকালের দরপতনে এক্মি ল্যাব, রেনেটা, বিবিএস, কপারটেক, এনার্জিপ্যাক, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট, স্কয়ার ফার্মা, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারসহ ১৯ কোম্পানি নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে নেমেছে। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর ২৯২টি শেয়ার ও ফান্ড ফ্লোর প্রাইসে নেমেছিল।
গতকাল ৯৩টি শেয়ার ফ্লোরের ওপরে থাকলেও ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ওপরে কেনাবেচা হয়েছে ৩৩টি। ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল আরও ১০টি। বাকি ৫০ শেয়ার ফ্লোর থেকে ১০ শতাংশের বেশি দরে কেনাবেচা হয়েছে। তবে এসব শেয়ারেরও ক্রেতা কমছে।
শীর্ষ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিনই আড়াইশ থেতে তিনশ শেয়ারে লেনদেন হচ্ছে না বললেই চলে। গুটি কয়েক শেয়ারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে কিছু জুয়াড়ি চক্র দর বাড়াচ্ছিল। ওই সব শেয়ারে ভর করে লেনদেনও হাজার কোটি টাকাও ছাড়ায়। এখন এসব শেয়ার দর হারাতে থাকায় সূচকও কমছে। এর সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও কমতে শুরু করেছে। গতকাল ডিএসইতে ৭২৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। অথচ গত মঙ্গলবারও এ বাজারে প্রায় ১৫শ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। গতকাল ৩৪৪ শেয়ারের কেনাবেচা হলেও ২০ শেয়ারের লেনদেন ছিল মোটের ৬৫ শতাংশের বেশি।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, নানা নেতিবাচক খবরের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। প্রায়শই খবর হচ্ছে, ২০টি ব্যাংকের কাছে ডলার নেই, এলসি খোলা বন্ধ। ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হতে পারে এমন খবরও আসছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, আগামীতে অর্থনীতি খুব খারাপ অবস্থায় যাবে। তবে অর্থনীতি নিয়ে যত নেতিবাচক খবর প্রচার হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি আসলে অত খারাপ অবস্থায় নেই- এমনটা মনে করেন ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এটি ঠিক, করোনাভাইরাস মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ডলারের দর বেড়েছে, সরবরাহে কিছুটা ঘাটতিও আছে। তবে সরকার এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে যাচ্ছে। ফলে শঙ্কার কথা যতটুকু বলা হচ্ছে, তত শঙ্কা নেই। কিন্তু এমন বার্তা বিনিয়োগকারীদের বোঝানোর মতো মানুষের সংখ্যা কম। নেতিবাচক প্রচার বেশি হচ্ছে বলে বাজার তার স্বাভাবিক শক্তিতে দাঁড়াতে পারছে না।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৯ কোম্পানির সবগুলোই ফ্লোর প্রাইসে ছিল। ৩৭ মিউচুয়াল ফান্ডেরও একই দশা। বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত ৫৮ শেয়ারের মধ্যে ফ্লোরে ছিল ৫৫টি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩টির মধ্যে ২১টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩২টির মধ্যে ২৬টি ফ্লোর প্রাইসে ছিল। সিমেন্ট খাতের ৭ কোম্পানির ৬টি একই অবস্থায়। ব্যাংক, সিরামিক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, পাট, কাগজের মতো কিছু ছোট খাতে ফ্লোরে পড়ে থাকা শেয়ার তুলনামূলক কম।