ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ক্রেতা সংকটের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে বড় দরপতন দিয়ে সপ্তাহ শুরু করেছে শেয়ারবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১২ মার্চ) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।
দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম কমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) এসে ঠেকেছে। ফলে ফ্লোরে আটকানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বড় হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে ৩১টি প্রতিষ্ঠান। ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
প্রতিদিন দিনের সর্বনিম্ন দামে বা ফ্লোর প্রাইসে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ আসছে। বিপরীতে শূন্য পড়ে থাকছে ক্রয় আদেশের ঘর। ফলে যারা দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির চেষ্টা করছেন তাদের সিংহভাগ ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে শেয়ারবাজারের লেনদেনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের দ্বিতীয় মিনিটেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকেনি। প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে সূচকের ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যায়।
অবশ্য শেষ সাড়ে তিন ঘণ্টার লেনদেন সূচকের টানা পতন হয়। এসময় লেনদেন অংশ নেওয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। ফলে একদিনে বড় হয় দরপতনের তালিকা, অন্যদিকে ক্রয়ে আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এতে লেনদেনের শেষ পর্যায়ে এসে প্রায় দুশ প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ১৭টি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পারেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৯টির। আর ১৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩১টির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ কমে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে। এর মাধ্যমে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৩টি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৩৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুইসূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২২১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৩৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে বাজারটিতে লেনদেন কমেছে ১১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চার কার্যদিবস পর ডিএসইতে পাঁচশ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।
টাকার অংকে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের ২২ কোটি ৭২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিডিকম অনলাইন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, আমরা নেটওয়ার্ক, এডিএন টেলিকম, জেমিনি সি ফুড এবং বসুন্ধরা পেপার।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৪টির এবং ৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।