সুমন ইসলাম
চলমান বন্যায় দেশের ১২ টি জেলার ৭৪ টি উপজেলার ৩১৬ টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার ৬০ টি গরুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে খামারীদের ক্ষতি হয়েছে ২৬১ কোটি ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪ শ টাকা।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মনজুর মোহাম্মদ শাহাজাদা বার্তা২৪.কমকে জানান। এখন পর্ন্ত আমরা সারাদেশের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র হাতে পাইনি। এটি প্রাথমিক। প্রতিদিনই ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে বানভাসী মানুষের খাবারের পাশাপাশি গবাদি পশু খাদ্যও সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে।
খামারীদের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং সরকারের শীর্ষ মহলে আলোচনা করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা খামারিদের জন্য সহায়ক হবে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানাগেছে, সিলেট বিভাগে ৯৮০ টি কামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি৭৮ লাখ৭৯ হাজার৫ শ টাকা। গরু ২ লাখ১৬ হাজার৭৮৩ টি, মহিষ ২৮ হাজার ৭০৭ টি, ছাগল৫৪ হাজার ৫১৯ টি, ভোড়া ১৯ হাজার ৬৯০ টি, হাস ২ রাক ৭১ হাজার ৮৩১ টি, মুরগি ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪৯ টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৮০ টি খামার ক্সতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ১৫ রাখ,২০ হাজার টাকা।গরু ১ লাখ ২৯ হাজার৫০৮ টি, মহিষ ৬৫ টি, ছাগল ৭৩ হাজার ৫০২ টি, ভেড়া ৭৮৪২ টি, হাঁস ২ লাখ২২ হাজার ৫২০ টি, মুরগি ২ লাখ ৩ হাজার ৮৩২ টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রংপুর বিভাগে পুরো খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তবে এখানে অর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ টাকার গবাদি পশুর মধ্যে গরু ৪৭ হাজার ২৮৮ টি, মহিষ ৭৩২ টি, ছাগল ২৪ হাজার ২৫৪ টি, ভোড়া ৫০০৮ টি, হাঁস ৪৫ হাজার ২১৪ টি, মুরগি ৮৭ হাজার ৭০৯ টি।
ঢাকা বিভাগে পুরো খামার ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও৷ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৩৬ কোটি ৭১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার গবাদি পশু। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৩২ হাজার ৯১৮ টি, হাঁস ২ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৫ টি।
এছাড়াও সুনামগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ১১ টি উপজেলার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও ৯৮ কোটি টাকার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বার্তা২৪. কমকে বলেন, হঠাৎ করে সৃষ্ট বন্যায় মানুষের পাশাপাশি খামার মালিকরাও রয়েছেন বিপদের মধ্যে শেষ খবর যাওয়া পর্যন্ত ২ হাজার খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকের গবাদি পশু চুরি হয়ে গেছে, ভেসে গেছে পানির স্রোতে, অনেক পশু মারাও গেছে। অনেকে আবার গবাদি পশু নিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র গেছেন। সেখানে একই জায়গায় মানুষ ও গবাদি পশু থাকছে। সে সব জায়গায় মানুষের যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি পশুর জন্যও খাদ্য প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে প্রাণি বা গবাদিপশুর খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। পানিবাহীত রোগ থেকে পশুকুল রক্ষায় প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে ( যেখানে পশু রয়েছে) ভ্যাটেনারী ডাক্তারকে দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, খামারীদের কথা চিন্তা করে যে সব জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই সেসব জায়গায় গবাদি পশুর জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা। এসব পশুবিক্রি বা কোরবানী হাটে তোলা পর্যন্ত ভালো রাখার ব্যবস্থা করা। বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে স্বল্প বা বিনা সুদে আর্থিক সহায়তা দিতেও সরকারের কাছে আহ্বানও জানান তিনি।