ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: বুধবার (১ জুন) থেকে হস্তচালিত (নন ব্র্যান্ড) বেকারিপণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দাম সমন্বয়ের জন্য মঙ্গলবার (৩১ মে) থেকে হুট করেই হস্তচালিত বেকারি মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘটে যায়। একইদিন এ মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এলো। সারাদেশে হস্তচালিত বেকারির পণ্যে মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
জালাল উদ্দিন বলেন, দাম বাড়ানোর দাবি অনেক দিনের। সেজন্য ২০ শতাংশ দাম বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তৈরি ব্র্যান্ডের বেকারিগুলো তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। সেজন্য হস্তচালিত বেকারিগুলোও দাম বাড়ানোর দাবি করে আসছিল।
সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সবশেষ জানুয়ারি মাসে হস্তচালিত বেকারি পণ্যের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
হস্তচালিত বেকারি দেশের গ্রামগঞ্জে, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়কের পাশে ছোট ছোট দোকানে পাউরুটি, বনরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের কনফেকশনারি পণ্য বিক্রি করে। এসব পণ্যের ভোক্তা হচ্ছেন দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক, সবজি বিক্রেতাসহ সমাজের নানা শ্রেণি ও পেশার লোক। ফলে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে তাদের ওপর চাপ বাড়বে।
এদিকে মঙ্গলবার এসব বেকারির কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একদিনের ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার চেয়ে বেশিদিন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্থানীয় বেকারি মালিকরা।
এর মধ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বেকারি পণ্যের সরবরাহ বন্ধ ছিল। গতকাল তাদের সরবরাহকারী বেকারি থেকে জানানো হয়, কয়েকদিন কোনো বেকারি পণ্য সরবরাহ করা হবে না।
সেগুনবাগিচা এলাকায় চা দোকানি সিরাজ বলেন, মঙ্গলবার তারা কোনো পণ্য দেয়নি। সোমবার শুধু জানিয়েছে ধর্মঘট। তবে কতদিন সেটা বলেনি। দাম বাড়লে আবার পণ্য দেবে বলে জানিয়েছে।
ওই এলাকার কয়েকটি দোকানে সরবরাহ না থাকায় বেকারিপণ্যে টান পড়েছে। অনেক দোকানে হস্তচালিত বেকারিপণ্যের বদলে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি রুটি ও বিস্কুট বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আবার যেসব দোকানে মিলছে সেগুলো আগের সরবরাহ। মঙ্গলবার নতুন সরবরাহ না থাকায় দোকানে যে পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে তা আগের দিনের বা তারও আগে তৈরি।
এদিকে মগবাজারে সুমন বেকারি বন্ধ দেখা গেছে। মোবাইলে এর মালিক সহিদুল্লা বলেন, সমিতির সিদ্ধান্তে বেকারি বন্ধ। দাম বাড়লে খোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, তেল, আটা-ময়দাসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় কয়েক মাস লোকসান দিয়ে বেকারি চালানো হচ্ছে। দাম না বাড়লে ব্যবসা করার উপায় নেই।
হস্তচালিত বেকারি সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশের অধিকাংশ বেকারিকে চিঠির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর বিষয় জানানো হয়েছে। ফলে এ ধর্মঘট উঠে যাচ্ছে বুধবার থেকে।
বেকারি মালিকরা বলছেন, বেকারিতে যেসব কাঁচামাল লাগে তার মধ্যে প্রায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। তেল, ডালডা, আটা-ময়দা ছাড়াও যেমন চিনি, দুধ ও ডিমের দামও বাড়তি। এরই মধ্যে লোকসান পোষাতে না পেরে অনেক বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে।
তারা বলছেন, বড় বড় কোম্পানির বেকারিগুলো, যা অটো ও সেমি-আটো মেশিনে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে পণ্য বানায় তারা এ হস্তচালিত বেকারি মালিকদের সংগঠনের সদস্য নয়। ওইসব কোম্পানি এরই মধ্যে তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে।
সমিতির তথ্যে, করোনার আগে সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার হস্তচালিত বেকারি ছিল। মহামারিকালে হাজারখানেক সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে অনেকে ব্যবসায় ফেরেন। তারপরও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আবারও ৫ শতাধিক বেকারি বন্ধ।