অনলাইন ডেস্ক: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বড় ধরনের অনীহা দেখা দিয়েছে। ব্যবসা করতে না পারা আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়ায় এমন অনীহা বিনিয়োগকারীদের। নামমাত্র দামেও অনেক ব্যাংকের শেয়ার কিনতে চাচ্ছেন না তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্ধারণ করে দেয়া ফ্লোর প্রাইসের (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) কারণে ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন ওইভাবে হয়নি। ফ্লোর প্রাইস না থাকলে ব্যাংকের শেয়ারের আরও ভয়াবহ দরপতন হতো।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয় বিএসইসি। ফলে একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে শেয়ারের দাম কমার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
একপর্যায়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামাল দিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এই বন্ধের মধ্যেই ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোনো ব্যাংকই ১৫ শতাংশের বেশি নগদ এবং নগদ ও বোনাস শেয়ার মিলিয়ে ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আসার আগেই লভ্যাংশ ঘোষণা করা কয়েকটি ব্যাংক পরবর্তীতে তাদের লভ্যাংশে সংশোধনী এনে কমিয়ে দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ৩১ মে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলে একের পর এক ব্যাংকের শেয়ার দাম কমতে শুরু করে। প্রথমদিনের লেনদেনেই দাম কমে ১৬টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইস বা দাম কমার সর্বনিম্ন সীমায় এসে ঠেকে। পরের চার কার্যদিবসেই অব্যাহত থাকে ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন। এতে বর্তমানে ২৭টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে।
ব্যাংকের শেয়ার দামের এমন দুরবস্থার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক না। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে। এটা ক্রমশই কমছে অনেক দিন ধরে। এতে করে ব্যাংকের ভবিষ্যৎ মুনাফা নিয়ে স্বভাবতই সন্দেহের অবকাশ আছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার কিনতে এ মুহূর্তে আগ্রহী নন। চাহিদা না থাকলে স্বাভাবিক নিয়মে যেকোনো কিছুর দাম কমে। ব্যাংকের শেয়ারেও দাম কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়ার কারণেই শেয়ারের এমন দরপতন হয়েছে। আগে যেভাবে খেলাপি হয়ে যাওয়ার পরও ব্যাংকগুলো বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে, তাতে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল করে দিয়েছে। লভ্যাংশ দিতে হবে ঠিক আছে, কিন্তু কোম্পানির অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেলে লভ্যাংশ দিয়ে কী হবে। আমি মনে করি কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ঠিক আছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি খারাপ, যে কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।