ভ্যাটের বোঝা কমছে রপ্তানিমুখী শিল্পে। বন্দর, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, সিএন্ডএফ, বিমা কোম্পানি ও শিপিং এজেন্ট সেবার বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি পেতে ভ্যাট কমিশনারের কাছ থেকে অব্যাহতির সনদ নিতে হবে না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
জানা গেছে, ১৭ অক্টোবর ভ্যাট নীতির সদস্য মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে রপ্তানিমুখী শিল্প মালিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে শিল্প মালিকরা বন্দর, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, সিএন্ডএফ, বিমা কোম্পানি ও শিপিং এজেন্ট সেবার বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি পেতে জটিলতার কথা তুলে ধরেন।
শিল্প মালিকরা বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি খাত ভ্যাটের আওতামুক্ত। আবার ভ্যাট অব্যাহতির প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান সাধারণ আদেশ মোতাবেক অব্যাহতি সনদ নেওয়া জটিল প্রক্রিয়া। এতে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া কত দিন পরপর অব্যাহতিপত্র নিতে হবে তা উল্লেখ নেই।
যেহেতু রপ্তানি খাত ভ্যাটের আওতামুক্ত সেহেতু ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রেখেও যদি বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়, তাহলে রপ্তানিকারকদের জন্য তা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ব্যবসা সহজীকরণের অংশ হিসাবে কমিশনারের কাছ থেকে অব্যাহতি সনদ গ্রহণের বিষয়টি বাতিল করা জরুরি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আলোচ্য সেবার বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি পেতে ভ্যাট কমিশনারেটে আবেদন করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (যেমন বন্দর সেবার ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ) এবং সেবা সংস্থার (ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, সিএন্ডএফ, বিমা কোম্পানি ও শিপিং এজেন্ট) ক্ষেত্রে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রপ্তানিকারকের ভ্যাট নিবন্ধন ও অন্য কাজগপত্র (বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন, রপ্তানিকারক সংগঠনের সদস্য সনদ) যাচাই করে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেবে। বর্তমানে এ সেবার বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি পেতে ভ্যাট কমিশনারের কাছ থেকে ভ্যাট অব্যাহতির সনদ নিতে হয়। একইসঙ্গে আরও সিদ্ধান্ত হয়, এ সুবিধার অপব্যবহার রোধে প্রতি বছর রপ্তানিমুখী শিল্পকে নিরীক্ষা করা হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, রপ্তানিমুখী শিল্প আগেও ভ্যাটের আওতামুক্ত ছিল, এখনো আছে। নতুন ভ্যাট আইনে সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট করতে রপ্তানিমুখী শিল্পের অব্যাহতির আদেশটি সংশোধন করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে বিধায় আদেশ পুনরায় সংশোধন করে আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কারণ সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পকে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এজন্য আবার কমিশনারের কাছ থেকে সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ঝামেলার সৃষ্টি করে।
এনবিআরের এ সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। তিনি আরও বলেন, শুধু বন্দর বা সিএন্ডএফ সেবার ক্ষেত্রেই নয়-গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এ নিয়ম চালু করা উচিত। এখন গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিলের ভ্যাট অব্যাহতি পেতে ঝামেলা পোহাতে হয়। কেউ যদি এ সুবিধার অপব্যবহার করে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। কিন্তু বিধি-বিধান পরিপালনের নামে ব্যবসার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করা কাম্য হতে পারে না।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন-বন্দর, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার ও শিপিং এজেন্ট সেবার বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি প্রক্রিয়া সহজ করেছে, এ জন্য এনবিআরকে ধন্যবাদ। কিন্তু রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে-গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ।
এসব ইউটিলিটি বিলের বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। সবার আগে এগুলোর সুরাহা করা প্রয়োজন। যত সহজে ব্যবসায়ী অব্যাহতি পেতে পারে সে উদ্যোগ নিতে হবে।