উপজেলা প্রতিনিধি বেনাপোল (যশোর)
বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছনোর আগে বনগাঁর মিলন পল্লি মাঠের পার্কিংয়ে ট্রাকের পার্কিং চার্জ দিন প্রতি ৮০ টাকা থেকে একলাফে বেড়ে ৮০০ টাকা হওয়ায় ক্ষুব্ধ ভারতীয় রফতানিকারক সংস্থার মালিকরা। রাজ্য সরকারের পরিবহন দপ্তরের এই পার্কিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের জেরে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
পার্কিং চার্জ কমানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে ওপারের বন্দর ব্যবহারকারী ৯টি সংগঠনের ব্যানারে পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সেদিন থেকে অবস্থান-বিক্ষোভ করেছেন তারা। দিনের পর দিন পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় বহু ট্রাকের পার্কিং বিল ছুঁয়েছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এই পরিমাণ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় শুক্রবার থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিং থেকে বেরই হয়নি।
ভারতের বনগাঁ শহরের ওপর দিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে পৌঁছনোর ছাড়পত্র দেওয়া হয় ওই মিলন পল্লি মাঠের পার্কিং থেকেই। এতদিন এই পার্কিং দেখতো বনগাঁ পৌরসভা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওই পার্কিং অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকারের পরিবহন দপ্তর। তারপরই পার্কিং চার্জে বদল এনে জারি করা হয় নয়া নির্দেশিকা। ওই নির্দেশিকায় পার্কিং চার্জ দিনের হিসাবে ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ করা হয়। ট্রাকভেদে কোথাও কোথাও তা ৯৬০ টাকা থেকে এক হাজার টাকাও হয়েছে।
রপ্তানিকারক সংস্থার মালিকদের বক্তব্য, কোনো পণ্যবাহী ট্রাক মিলন পল্লি মাঠে এলেইতো তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। অন্তত ৩০-৩৫ দিন পার্কিংয়ে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে থাকে। তারপর মেলে ছাড়পত্র। আগে যেখানে পার্কিংয়ের জন্য সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪০০ টাকার মতো গুনতে হতো, সেখানে এখন দিতে হচ্ছে ২৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।
ওপারের বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, কালিতলা টার্মিনালের পার্কিং চার্জ অতিরিক্ত বৃদ্ধি করায় ওপারের বন্দর ব্যবহারকারী ৯টি সংগঠনের ব্যানারে পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন শুরু হলেও রোববার (১৩ মার্চ) মাইকিং করে পথে নামেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সোমবার (১৪ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিং এন্ট্রি করবে না বলে বনগাঁর সমস্ত ট্রান্সপোর্ট, ট্রাকের মালিক ও ড্রাইভারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবারের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে রাতে সকলে বসে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য অসীম সেন বলেন, ‘রাজ্য সরকারের যে আধিকারিকেরা এই নির্দেশিকা জারি করেছেন, তারা হয়তো জানেন না এখানে কোনো কোনো ট্রাক ৪০-৪৫ দিনও দাঁড়িয়ে থাকে। গত বৃহস্পতিবার থেকে কালীতলা (মিলন পল্লি মাঠ) পার্কিং থেকে কোনো ট্রাক বের করা যায়নি। কারণ কারো কাছে এত টাকা ছিল না। এতদিন কোভিডের কারণে এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খারাপ। তারমধ্যে পার্কিংয়ের জন্য এত টাকা কিভাবে দেওয়া সম্ভব?
রপ্তানিকারক সংস্থার মালিকদের আরও দাবি, শুধু পেট্রাপোলে যাওয়ার জন্যই মোটা টাকা দিতে হচ্ছে। ঘোজাডাঙা ও হিলির মতো অন্য সীমান্তে যাওয়ার জন্য পার্কিং চার্জ বাড়ানো হয়নি। রাজ্য পরিবহন দপ্তর যদি পার্কিং চার্জ না কমায়, তাহলে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা পণ্য রপ্তানি করবেন না। অন্য সীমান্তে চলে যাবেন। নয়তো জাহাজ বা রেলে পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
জানা গেছে, পার্কিং চার্জ কমানোর দাবিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও বৈঠক করেছেন রপ্তানিকারক সংস্থার মালিকরা। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে।
জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, পার্কিং চার্জ বাড়ানো হলেও পেট্রাপোলে যাওয়ার ছাড়পত্র যাতে এক-দেড় মাসের পরিবর্তে দুই-তিন দিনের মধ্যেই পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থাই করছে রাজ্য সরকার।
তবে ব্যবসায়ীদের পাল্টা দাবি, রাজ্য সরকার যদি দু’তিন দিনের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবে, তা কার্যত অসম্ভব। কারণ তার জন্য যশোর রোডের রাস্তা যতটা চওড়া হওয়া বাঞ্ছনীয়, বাস্তবে তা নয়। ফলত দিনের সংখ্যা কমে দশ হলেও আগের তুলনায় সেই মোটা টাকাই গুণতে হবে রপ্তানিকারণ সংস্থার মালিকদের।
পার্কিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মন্ডল বলেন, বনগাঁর অর্থনীতি সীমান্ত-বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। সেখানে এত টাকা পার্কিং চার্জ কেউ দিতে পারবে না। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতি হচ্ছে বনগাঁর ব্যবসায়ীদের।
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, রপ্তানি পণ্য পার্কিংয়ে রাখলে তার খরচ আমাদের দিতে হয়। পার্কিংয়ে ট্রাক রাখার পরে পেট্রাপোল বন্দরে আসতে ৩৫-৪০ দিন সময় লাগে। বর্তমানে রাজ্য পরিবহন দপ্তর এই টার্মিনালের দায়িত্ব নেওয়ার পর পার্কিং চার্জ যেভাবে বৃদ্ধি করেছেন সেটা পরিশোধ করা কোনো ট্রাকচালক বা মালিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে পার্কিং ফি বাড়ানোর ফলে আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।