ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এফবিসিসিআই। তবে ব্যবসীরা দাম কমাতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মতিঝিলে এফবিসিসিআই এর কার্যালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানী, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনার নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় পণ্যের দাম, আমদানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এসময় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, অনেক দেশের ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দেয়। আমরাও তো একটা উদারহণ তৈরি করতে পারি। চলুন এবার রমজানে কিছু মার্কেটে পণ্যের দাম কমিয়ে দেই। এছাড়া পণ্যে ছাড়ও দিতে পারি। আশা করছি এবার রজমানে ব্যবসায়ীরা লাভের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে পণ্যের দাম কমাবে।
তবে এফবিসিসিআই সভাপতির এমন আহ্বানের সাড়া দেননি আরেক ব্যবসায়ী নেতা, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশ রমজান মাসে পণ্যের দাম কমাতে পারেন, তবে আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও সেরকম নয়। পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হবে না। তবে দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখা হবে। দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত থেকে স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছে। এই স্মার্ট বাংলাদেশে চুরি চলবে না। পণ্য বিক্রি করলে পাকা রশিদ অবশ্যই দিতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর অনুরোধ করা হলেও রিজার্ভ থেকে পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ করেছে চিনি রিফাইনারি এসোসিয়েশনের নেতারা।
এছাড়া আমদানি শুল্ক না কমালে আসন্ন রমজানে চিনির বাজারে চলমান অস্থিরতা কোনোভাবেই কমবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা।
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, গ্যাসের সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। প্রতি কেজি চিনিতে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা শুল্ক দিতে হয়। বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়ছে। আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে গেছে।
চিনি আমদানিতে শুল্কহার কমিয়ে তা পুননির্ধারণ না করা হলে, রমজানে স্বল্পমূল্যে চিনি খেতে পারবেন না ভোক্তারা, এমনটাই মন্তব্য করেন তিনি।
মিল মালিকদের এমন বক্তব্য ক্ষুব্ধ এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, রোজার জন্য সব পণ্যই পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। নাই, নাই বলে বাজারে কৃত্রিম অস্থিরতা তৈরির নাটক চলছে।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘ভোজ্যতেল, চিনি কী পরিমাণ আমদানি করতে হবে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে। তারপরও ব্যাংকগুলো এলসির অর্থ পরিশোধ না করায় জাহাজ থেকে আমদানি করা চিনি খালাস করা যাচ্ছে না। রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো দ্রুত অর্থছাড় করছে না।’
এ সময় ভারত থেকে চিনি আমদানির অনুমতি চান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এতে রমজানের আগে চিনির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন বলেন, বর্তমানে খোলা চিনির দাম ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা। যেখানে ভারতে প্রতিকেজি চিনির দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
এছাড়া খেজুর, ছোলা বুট, পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক থাকবে। তবে আদা, রসুন, শুকনা মরিচের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, “বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হলে ব্যবসায়ীদের অসাধু তকমা দেওয়া হয়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।” তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে বিক্রয়ের পাকা রশিদ বা ভাউচার থাকা আবশ্যক বলে জানান তিনি।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান, পি.এস.সি. বলেন, “বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুদ ইত্যাদি নিয়ে বাজারে যে অভিযান আমরা করি, সেগুলো করতে চাইনা আমরা। ব্যবসায়ীরাই নিজেরা সামাধান করতে পারে এগুলো।”