লেনদেন খরার বৃত্তে শেয়ারবাজার

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: টানা দরপতন আর লেনদেন খরার বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে দেড় মাস পর একদিনে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নামলো লেনদেন।

এমন লেনদেন খরা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি দরপতনের তালিকায়ও নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ডিএসইতে যে কয়কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে, কমেছে তার আটগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের। এতে সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে, কমেছে তার পাঁচগুণের থেকে বেশি। ফলে এ বাজারটিতেও কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম ১০ মিনিট বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। এতে লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

এরপর সূচক টানা নিচের দিকে নামতে থাকে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দরপতনের মাত্র। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম কমার মাধ্যমে শেষ হয় দিনের লেনদেন। একই সঙ্গে পতন হয় সবকটি মূল্যসূচকের।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৮টির। আর ১৩২টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২২১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে দেখা দেয় লেনদেন খরা। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৮৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৪০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৫৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় কমেনি, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারির পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাইনপুকুর সিরামিকসের ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, জেমিনি সি ফুড, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ওরিয়ন ফার্মা, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস এবং মুন্নু এগ্রো।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ১২৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬২টির এবং ৫২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি কমে লেনদেনের পরিমাণ। একই সঙ্গে কমে বাজার মূলধন।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

অপর দিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমে ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৯ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমে ১১ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৫০ শতাংশ। ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমে ৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমে ২২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ৩৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।