ভোক্তাকন্ঠ রিপোর্ট: ‘অত্যাবশকীয় পণ্য আইন’ থেকে সিগারেটকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকাভুক্ত করে রাখাটা ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, শুধু তামাক নয়, মাদকমুক্ত দেশ গড়তে হবে।
রোববার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে ধূমপান করেছি। গত তিন বছর তা বন্ধ করেছি। এখন ভাবি, এই সময়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার মাধ্যমে কত ক্ষতি করেছি। তামাকের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা তো কেবল টাকার হিসেবে হয় না। কত জীবন থেমে যাচ্ছে। এগুলো আলোচনায় আনা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী তামাক নিয়ন্ত্রণে যে আইন করার কথা বলেছেন, আমার অবস্থান থেকে ১০০ ভাগ সততার সঙ্গে কাজ করবো। যেখানে যতটা প্রয়োজন, আমার পক্ষ থেকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যতটা সাহায্য প্রয়োজন, করবো। আমাদের শুধু তামাক নয়, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যাকে মুক্ত করতে হবে তাকে এসেন্সিয়াল পণ্য তালিকায় রাখার তো প্রয়োজন নেই। সিগারেট পণ্য হিসেবে একদিকে গুরুত্বপূর্ণ, অপরদিকে মানুষের জন্য ক্ষতিকর। একদিকে অনেকে বলছেন অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব রয়েছে, অন্যদিকে বলা হচ্ছে তামাকমুক্ত করার কথা। আমাদের মধ্যে দুই রকম একটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে এসে একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া তামাকের খারাপ দিকটি বাদ দিয়ে কোনো ভালো গুণ আছে কিনা, বা এখান থেকে কোনো ওষুধ তৈরি করা যায় কিনা সে বিষয়ে এখন ভাবা যেতে পারে।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী দেশকে তামাকমুক্ত করতে শতভাগ সততার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।
সচেতনতার প্রয়োজন উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, তামাক মুক্ত করতে আমাদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে পারলেই আমরা অর্ধেক লড়াই জিতে যাবো। পাশাপাশি বিকল্প কর্মক্ষেত্রও তৈরি করতে হবে। আমি যেই এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছি সেই এলাকায় অনেক মানুষ বিড়ি তৈরি করে। সেখানে অনেক শ্রমিক কাজ করে। এখানে অনেক মানুষের জীবিকা জড়িত। আমি অনেক চেষ্টা করছি তারা যেন এই কাজ থেকে বেরিয়ে গার্মেন্টস সেক্টরে চলে আসে। তারা অনেকে এসেছেও। সুতরাং তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে।
তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার স্বাস্থ্য, জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত পরিবর্তন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন উপস্থিত বক্তারা। এছাড়া অবিলম্বে অত্যাবশকীয় পণ্য আইন সংশোধন করে সিগারেটকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী সকমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল তামাক মুক্ত বাংলাদেশ কিন্তু আমরা এখন যে আইন নিয়ে কথা বলছি সেটা হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। অর্থাৎ আমরা মেনে নিচ্ছি কিছু কিছু তামাকের ব্যবহার থাকবে। আমরা কিন্তু বলছি না বাংলাদেশের কোথাও কোনো তামাক ব্যবহার করা যাবে না। তার মানে তামাকের ব্যবহার কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটির বেশি। এভাবে চলতে থাকলে তামাক মুক্ত হবে তো দুরের কথা তামাকের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, একদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি অন্য দিকে যদি আমরা আমাদের বাজেটের দিকে তাকাই, প্রতি বছর তামাক কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে তামাকের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সেই বাড়তি দামের উপর কর আরোপ করছি। এমন নিয়ম পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। এ বিষয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে নিরব ছিলেন। কোনো উত্তর দিতে পারেননি। আসা করছি সংসদের আগামী অধিবেশনে এ বিষয়ে তিনি একটা ব্যাখা দিবেন। কেননা তামাক কোম্পানির কোনো খরচ বাড়লো না, অথচ আপনি তাদের দাম বাড়িয়ে দিলেন। এতে করে কোম্পানিগুলোর প্রফিট বাড়ছে। তাহলে একটি মৌলিক প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি কখনো তামাক মুক্ত হবে? যখন আমরা তামাক শিল্পকে আরও বেশি লাভজনক করছি। এই শিল্পকে লাভজনক করে আমরা বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করতে পারবো না।
তিনি আরও বলেন, একদিকে আমরা বলছি, আমরা তামাক মুক্ত বাংলাদেশ চাই। আরেক দিকে সেই জায়গায় যাতে আমরা কোনোভাবে পৌঁছাতে না পারি সব ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করছি। এই দৌততা থেকে যদি আমরা সরে আসতে না পারি তাহলে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ কখনই সম্ভব হবে না।
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক প্রমূখ।