ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দাম কমে প্রতিদিন নতুন নতুন কোম্পানি এসে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) যুক্ত হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে আটকানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে ৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে ফ্লোর প্রাইসে আটকানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দুইশ হয়ে গেছে।
ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিন দিনের সর্বনিম্ন দামে বা ফ্লোর প্রাইসে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ আসছে। বিপরীতে শূন্য পড়ে থাকছে ক্রয় আদেশের ঘর। ফলে যারা দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির চেষ্টা করছেন তাদের সিংহভাগ ব্যর্থ হচ্ছেন।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বড় অংশের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের এমন ক্রেতা সংকট দেখা দিলেও, কিছু প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিপরীত চিত্র। প্রতিদিন এসব প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজারে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয়শ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস বাজারটিতে ছয়শ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো। অবশ্য লেনদেন ছয়শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও তা আগের কার্যদিবসের তুলনায় কম।
লেনদেন কমার পাশাপাশি ডিএসইতে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এরপরও বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। তবে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত আপর দুই সূচক কমেছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে এ বাজারটিতেও দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকে ব্যপক অস্থিরতা ছিল। সাড়ে চার ঘণ্টার লেনদেনে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক অন্তত ১২ বার ওঠানামা করে। সূচকের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স দুই পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৬২ পয়েন্টে থিতু হয়।
অবশ্য প্রধান মূল্যসূচক সামান্য বাড়লেও পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি অপর দুই সূচক। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
আর দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১০টির এবং ১৮৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯টির শেয়ারের দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ কমে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে। এতে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ১৮৯টিতে দাঁড়িয়েছে।
তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৪৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৭৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। লেনদেন কমলেও বাজারটিতে টানা তিন কার্যদিবস ছয়শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো। এর আগে গত দেড় মাসের মধ্যে ডিএসইতে টানা তিন কার্যদিবস ছয়শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ১৬, ১৭ এবং ১৮ জানুয়ারি টানা তিন কার্যদিবস ছয়শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল।
এদিন টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনিমি সি ফুডের ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৩ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, এডিএন টেলিকম, বসুন্ধরা পেপার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, রূপালী লাইফ, ওরিয়ন ফার্মা এবং শাইনপুকুর সিরামিকস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।