ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতিও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। প্রায় এক মাস পর সোমবার (৬ মার্চ) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৭০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচকও।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এ বাজারটিতে সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়লো।
অবশ্য এরমধ্যেও তালিকাভুক্ত একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট দেখা যাচ্ছে। ক্রেতা সংকটে পড়ে লেনদেনের শেষ দিকে ডিএসইতে প্রায় দুইশো প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দিনের সর্বনিম্ন দামে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল বিক্রির আদেশ আসে। ফলে যাদের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে ক্রেতা সংকটে তারা তা বিক্রি করতে পারেননি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের দেড় ঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
এতে আবারও শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু লেনদেনের শেষ দিকে এসে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে আটকে যায় সূচকের বড় উত্থান। এমনকি ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিত পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৫টির। আর ১৭৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকায় একটির দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে।
অন্যদিকে ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। ক্রেতা সংকটে পড়া এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭২টি আগে থেকেই ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। বাকি ৫টি প্রতিষ্ঠানের দাম কমে আজ নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে।
অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে পড়লেও দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৬২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৬৫ কোটি ২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ৮ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে আবারও সাতশো কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো।
টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- শাইনপুকুর সিরামিকস, এডিএন টেলিকম, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং আমরা নেটওয়ার্ক।
এদিন অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮টির এবং ৮৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।