সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে লেনদেনে বেশভালো গতি দেখা গেছে।
প্রথম ঘণ্টায় লেনদেনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭০ পয়েন্ট বেড়েছে। আর লেনদেন হয়েছে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে সূচকের ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
এদিকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে দেখা দেওয়া মতবিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে বসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আর এ বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের প্রথম মিনিটে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
সময়ের সঙ্গে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সকাল ১১টায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের তুলনায় ৭০ পয়েন্টে বেড়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ২৩ পয়েন্ট। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়েছে।
এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪টির। আর ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৭৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৬ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৮টির, কমেছে ২৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির।
এদিকে কয়েক মাস ধরে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যো বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেওয়ায় টানা আট কার্যদিবস দরপতন হয় শেয়ারবাজারে।
এ পরিস্থিতিতে ৩০ নভেম্বর বৈঠকে বসে এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠক শেষে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড নিয়ে গঠিত স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাপারে একমত বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিষয়টি নিয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে।
তিনি বলেন, স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের নিয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিএসইসি-বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়পক্ষ এ বিষয়ে আন্তরিক। আমাদের কারো সঙ্গে কারো কোনো মতবিরোধ নেই।
বিএসইসির এ কমিশনার বলেন, বৈঠকে আমার মনে হয়েছে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই আন্তরিক। যে কারণে তারা বন্ডে বিনিয়োগকে বিনিয়োগ সীমার বাইরে রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এছাড়া বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসকে বিবেচনায় নেওয়ার যে দীর্ঘদিনের চাহিদা রয়েছে, সেটাও তারা সমাধান করবে। এ জন্য যা করণীয় তারা তাই করবেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বাজার নিয়ে হতাশ হবেন না। বাজার ভালো করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা উভয় রেগুলেটরি বডি ভালো বাজারের জন্য যা যা করা দরকার তা করে যাবো।
বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর বুধবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক একদিনে বেড়ে যায় ১৪৩ পয়েন্ট। তবে সন্ধ্যার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, শেয়ারবাজারে তফসিলি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৯৯৩-এ শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের বিষয়ে বিদ্যমান কতিপয় আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বিএসইসির প্রতিনিধি দলকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সভার পরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই সভার কতিপয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিএসইসির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত এ সভা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএসইসির উদ্যোগে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠনের ফলে তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন এবং পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্নিষ্ট বছরের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া সভায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৩৫(১)(গ) ধারা ও ২২ ধারা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ১০ ধারার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদাবিকৃত তহবিল স্থানান্তর এবং পুঞ্জিভূত লোকসান থাকা সত্ত্বেও নগদ লভ্যাংশ দেওয়া আইনসম্মত নয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক- বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন বিজ্ঞপ্তি আসার পর বুধবার রাতেই শেয়ারবাজর সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভপ্রকাশ করেন। এতে বিনিয়োগকারীদের এক ধরনের আতঙ্কের চিত্র উঠে আসে।
আর বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হতেই বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডিএসইতে লেনদেন শুরুত হতেই প্রধান মূল্যসূচক ৮৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।