অর্থনীতি ডেস্ক: আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সারের জন্য বিপুল ভর্তুকি দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে ভর্তুকি কমালে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। ফলে সারের ভর্তুকি নিয়ে সরকার উভয় সংকটে পড়েছে।
আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক একথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম যেভাবে বেড়েছে, সে জন্য যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে তার চাপ সরকার নিতে পারছে না। এদিকে সারের দাম বাড়ালে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও পণ্য মূল্য বেড়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় সারের দাম বাড়ানো অথবা ভর্তুকি দেওয়া নিয়ে সরকার উভয় সংকটে পড়েছে। যদিও মন্ত্রণালয় মনে করে এখনই দাম বাড়ানো উচিত হবে না। দাম বাড়ানোর কোনও উদ্দেশ্যও নেই।’
তিনি আরও বলেন, ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে এ বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০ টাকা, এমওপিতে ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা। এ বছর সরকারের ভর্তুকি খাতে বাজেট ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন।
একদিকে এত ভর্তুকি দিলে অন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সারের দাম বাড়ালে কৃষকের কষ্ট বাড়বে; উৎপাদন খরচ বাড়বে। খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে ও খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সারের ভর্তুকি বাবদ এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী অর্থবছর শেষে আঠাশ হাজার কোটি টাকায় ঠেকবে। বাড়তি যে ভর্তুকি লাগবে তা দিতে অর্থ বিভাগ অপারগতা প্রকাশ প্রকাশ করেছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘কৃষককে সারে আমরা যে সহযোগিতা দেয়, এটা প্রণোদনা। এটা কোনো ক্রমেই ভর্তুকি না। তার ফলেই আজকে আমরা খাদ্যে অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ।’
এ পরিস্থিতিতে সরকার সারের দাম বাড়াবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আমরা যেকোনো ভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা উদারভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ইনটেনশন দাম বাড়ানো না, কমিয়ে আনা। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে চিন্তা করতে হচ্ছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনা চলছে।’
সারে ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে কোনো চাপ আছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এরাই চাপ দেয়। আগে বিএনপি সরকার ভর্তুকি দিতো না, ওদের কথা শুনতো।’
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিষয়টি ভাবার জন্য অনুরোধ জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার সবসময় কৃষকের পক্ষে। সরকার কোনো ভাবেই চায় না খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হোক। কিন্তু পরিস্থিতি সামলাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বে সারের দাম এক বছরে বেড়েছে তিন গুণ। বাংলাদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান মন্ত্রী।