হিলি প্রতিনিধি:
দেশে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান থাকায় পাথরের চাহিদা বেড়েছে। বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পাথর রফতানি কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি অর্ধেকে নেমেছে। সেই সঙ্গে টনপ্রতি দাম বেড়েছে ৪০০-৫০০ টাকা। এ অবস্থায় বিভিন্ন প্রকল্পে পাথর সরবরাহ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, ১/৪ সাইজের পাথর তিন হাজার ২০০ টাকা টন থেকে বেড়ে বর্তমানে তিন হাজার ৫৭০টাকা। ১/২ সাইজের পাথর তিন হাজার ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৫৭০ টাকা। ৫/৮ সাইজের পাথর তিন হাজার ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে চার হাজার ২০০ টাকা। ৩/৪ সাইজের পাথর তিন হাজার ৭৭০ টাকা থেকে বেড়ে চার হাজার ২০০ টাকা। ২০/৪০ সাইজের পাথর তিন হাজার ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে চার হাজার ১০০ টাকা টন বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরে পাথর কিনতে আসা হাফিজ উদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি পাথরের দাম বেড়েছে ৪০০-৫০০ টাকা। এরপরও চাহিদামতো পাথর পাচ্ছি না। দাম বাড়ায় আমরা যারা বিভিন্ন প্রজেক্টে পাথর সরবরাহ করি তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ কোম্পানির সঙ্গে আমরা যে দামে চুক্তি করেছি সেই দামে পাথর সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু দাম বাড়ার ফলে আমরা তো বাড়তি দাম পাচ্ছি না। আগের দামেই পাথর সরবরাহ করতে হচ্ছে আমাদের। তবে কেউ কেউ লোকসান থেকে বাঁচতে পাথর সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।
বন্দরে পাথর কিনতে আসা নাজমুল ইসলাম বলেন, মডার্ন থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যে চারলেনের সড়ক হচ্ছে সেখানে পাথর সরবরাহ করছি। হিলি স্থলবন্দর থেকে পাথর কিনে আমরা সেখানে সরবরাহ করি। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে পাথরের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা বেড়েছে। কিন্তু আমরা কোম্পানির সঙ্গে যে মূল্যে পাথর সরবরাহ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, দাম বাড়ায় আগের রেটে সরবরাহ করতে পারছি না। এজন্য ক্ষতির মুখে পড়েছি। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলোতে পাথর সরবরাহ করতে না পারায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি, ভারতীয় এই সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তাহলে আমরা আগের দামে পাথর পাবো। এতে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ হবে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পাথরের দাম বাড়তি। কারণ ভারতের যে অঞ্চল থেকে দেশে পাথর আমদানি হচ্ছে সেখানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এজন্য মূলত দাম বেড়েছে। আমরা কম দামে পাথর পাচ্ছি না। যে পরিমাণ চাহিদা তার অর্ধেকও পাচ্ছি না। এজন্য দেশের বাজারে পাথরের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, বেশি দাম দিয়ে পাথর কিনতে হচ্ছে আমাদের। সেজন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া দেশে ইটের দাম বাড়ায় পাথরের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুসহ দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলো ও কিছু সড়ক পাথর দিয়ে করা হচ্ছে। মাঝে করোনার কারণে অনেক প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি এসেছিল। এখন সবগুলো প্রকল্পের কাজ জোরেশোরে চলছে। এজন্য পাথরের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এই চাহিদাকে পূঁজি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে রফতানি কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে দাম বেড়ে গেছে।