সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি,
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সোমবার দুপুর ২টায় সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার। ২০১৭ সালের পর গত কয়েক বছরে নদীর পানি এমন উচ্চতায় প্রবাহিত হয়নি।
নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বড় ৪২টি হাওরসহ ছোট বড় প্রায় দেড়শ হাওরের ফসল হুমকিতে পড়েছে। দিরাইয়ের তুফানখালি, তাহিরপুরের গুরমা এক্সটেনসন, মাটিয়ান হাওরসহ অসময়ে নির্মিত দুর্বল বাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন লাখো কৃষক। এদিকে উজানের পানি নেমে দাড়াইন নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে শাল্লা উপজেলায় ৫০০ একর বোরো ফসলের জমি তলিয়ে গেছে।
সোমবার দুপুর আড়াইটায় উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের বাঘার বন হাওরে নদীর পানি প্রবেশ করে। চোখের সামনে তাদের সারা বছরের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে কৃষকরা নির্বাক। এ হাওরে ৮০ ভাগ জমি ছিল দামপুর গ্রামবাসীর, বাকি ২০ ভাগ খল্লি গ্রামের।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব, ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস, কৃষি অফিসের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু পানির প্রবল স্রোতের কারণে বাঁধ রক্ষার শেষ চেষ্টা করা সম্ভব হয়নি।
সোমবারও দাড়াইন নদীতে প্রায় ৪ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২/৩ দিন এই হারে পানি বৃদ্ধি হলে উপজেলার ছোট ছোট আরও বেশ কয়েকটি হাওর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাওরগুলো হলো, শাল্লা সদর নিকটবর্তী জোয়ারিয়া, কৌইয়া, কোনারবন, পুইট্টা, নাইপতার চর। এসব হাওরের প্রায় ২ হাজার একর বোরো ফসলি হুমকির মধ্যে রয়েছে।
শাল্লা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস বলেন, বাঘা বন হাওরটিকে রক্ষা করা যায়নি। নদীর পার নিচু হওয়ায় পানির প্রবল চাপে বাঁধ ভেঙে যায়। এতে প্রায় ৫০০ একর জমি ছিল বলে এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন বলে তিনি জানান।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাউবো সভাপতি মো. আবু তালেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি এবং প্রচণ্ড বাতাসে বেড়িবাঁধের বাইরে বাঘা বন নামে নিচু হাওরটি পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা বাঁধ রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।
সুনামগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জি-মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৪ মিলিমিটার, কিন্তু ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৫২ মিলিমিটার।
বৃষ্টির পানি নিচের দিকে নামছে আর সুনামগঞ্জে নদীর পানি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে হাওরের বিপৎসীমা ৬ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। সোমবার দুপুর ২টায় ওই পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন রোববার বিকেলে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়া-মাটিয়ান হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। সোমবার দুপুরে জেলা হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মনিটরিং কমিটির জরুরি সভায় হাওরের বাঁধ রক্ষায় নিয়োজিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ফসল রক্ষা বাঁধে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।