সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় ৮০ শতাংশ পেকে গেছে এমন ধান কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন। এতে জেলায় আবাদ করা ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমির কাঁচাপাকা বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় সুনামগঞ্জে অনেক বাঁধের ভাঙন ঠেকানো গেলেও কিছু বাঁধ ভেঙে কৃষকদের কাঁচা ধান ডুবে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার হাজারো কৃষক। ফাটল ধরা যে বাঁধগুলো এখনো টিকে রয়েছে, সেগুলোয় কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। যার ফলে সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় এবং ধনু বাউলাই নদী নেত্রকোনা জেলায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, আগামী ২৪-৭২ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় আকষ্মিক বন্যার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি সমতল ৫.২৫ সে. মিটার এবং শক্তিয়ারখলা পয়েন্টের যাদুকাটা নদীর পানি ৪.৪২ সে. মিটার ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩ মিলি মিটার এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৮৮ মিলি মিটার। তবে এখন পর্যন্ত জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও আগামী কয়েক দিনে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক, শ্রমিক হারভেস্টার মেশিন লাগিয়ে ধান কাটছেন। তারা ভয় আর শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, এখনো নদীর পানি ভরপুর। যদি মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া বাঁধ আর রক্ষা করা যাবে না। এর থেকে আধা পাকা ধান কাটাই ভালো।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রশাসন বলছে ধান তাড়াতাড়ি কাটতে। প্রয়োজনে মেশিন দেবে আমাদের। এখন পেটের দায়ে কাঁচা ধান কাটা হচ্ছে। বাঁধের অবস্থা ভালো না। হাওরের অবস্থাও ভালো না। তাই আমরা কাঁচা ধান কাটা শুরু করেছি।
বিশ্বম্ভরপুরের মল্লিকপুরের বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, দুই দিন পর পর শুনি বাঁধে এদিক ওদিক ফাটল ধরেছে। সেগুলো ইউএনও কামলা ধরে ঠিক করাচ্ছে। এই পানির ভয়ে কাঁচা ধান কাটাইতাছি। কৃষি অফিসারে কইছে ১৭ তারিখের পরে কাটতে পারমু না ধান। বন্যা হবে। এখন বিপদে পড়ে কেটে ফেলতেছি।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, সুনামগঞ্জের ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত (শুক্রবার) ৩০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। যা মোট আবাদের ১৪ ভাগ। আমরা স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দিচ্ছি ৮০ ভাগ পেকে গেছে এমন ধান যেন কাটা শুরু করেন।