সুফল পাচ্ছে আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্তারোপ

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আমদানি বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতির কারণে দেশের বাজারেও মার্কিন ডলারের দাম লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু শর্তারোপের কারণে কমেছে আমদানির এলসি (লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ। এর ফলে কমতে শুরু করেছে আমদানি। যার প্রভাব ডলারে পড়বে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুনে আমদানির জন্য এলসি খোলার মোট মূল্য পরিশোধের হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। গত জুনে ৭৩৮ কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আগের মাস মে-তে যার পরিমাণ ছিল ৮২০ কোটি ডলার। অবশ্য জুনে এলসি নিষ্পত্তি প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়ে ৮৫৫ কোটি ডলারে ওঠে। জুনে নিষ্পত্তি হওয়া এলসির বড় অংশ আগে খোলা। আর এলসি খোলা কমে যাওয়ার মানে নিকট ভবিষ্যতে আমদানি ব্যয় কমবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাইয়ে আমদানি মূল্য হ্রাসের হার কমতে পারে প্রায় ২৫ শতাংশ। সূত্র জানায়, জুনের চেয়ে এলসি আরও কমেছে জুলাইয়ে। মূল্য বিবেচনায় ২৭ তারিখ পর্যন্ত কমার হার ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময় পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার। মাস শেষে রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আগের মাস জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৪ কোটি ডলার। আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সফিউল আজম বলেন, ডলার সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পণ্য আমদানিতে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। যার কারণে আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে। ডলারের ঊর্ধ্বমুখী যে তেজিভাব আছে তা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে দেশের আমদানির অর্থ বড় একটা অংশ ব্যয় হয় জ্বালানিতে। বিশ্ব বাজারে এখন জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি। তাই ডলারের দাম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে সময় লাগবে।

এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে যায়। ফলে বিগত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত বছরের অগাস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।

গত ২৭ জুলাই (বুধবার) দিন শেষে রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৯৪৯ কোটি (৩৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলারে। প্রতি মাসে আট বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুদ এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রি করলেও ডলারের দর বেড়েই চলেছে। ব্যাংকগুলোতে আমদানির জন্য ১০০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকায় ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। রেমিট্যান্সের জন্যও ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে।

খোলা বাজারেও দর বেড়ে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগে যা ১১২ টাকায় ওঠে। বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব উদ্যোগের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে জুলাই মাসে। ফলে আমদানিতে এর প্রভাব বোঝা যাবে জুলাইয়ের তথ্য হাতে পাওয়ার পর।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিরতার পেছনে যেসব ব্যবসায়ী ও ব্যাংক দায়ী তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা শুনছি অনেকে এখন শেয়ারবাজারের মতো ডলার কেনাবেচা করছে। ডলার কিনে বাজারে সংকট সৃষ্টি করছে। এটি বন্ধ করা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করবে ৯৪ টাকায় আর বাজারে বিক্রি হবে ১১০ টাকায় এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এটা ওভারকাম করতে পারলে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। এমন অবস্থায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া অন্যসব পণ্যের আমদানির এলসিতে শতভাগ মার্জিনসহ বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে। আমদানি কমলে ও রেমিট্যান্স বাড়লে ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এছাড়া বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত ডলার বিক্রি করছে।    

তিনি বলেন, নগদ ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণেও আমরা কাজ করছি। ডলারের দাম বাড়িয়ে যেসব মানি চেঞ্জার ও ব্যাংক অন্যায্য মুনাফা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কারসাজিরোধে অভিযান শুরু হয়েছে। যা অব্যাহত থাকবে।