বিজনেস স্টান্ডার্ড এর মাধ্যমে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কৃষকের মাঠজুড়ে এখন কেবল হলুদের সমারোহ। সবুজ গাছের ডগায় হলুদ সূর্যমুখী ফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে। মাঠ জূড়ে সূর্যমুখীর হলদে আভায় বিমোহিত দর্শনার্থীরাও। তবে সৌন্দর্যের এই সূর্যমুখী ফুলেই রয়েছে বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা। আর তাই চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এবার ১৫৭২ মেট্রিক টন সূর্যমুখীর তেলের বীজ পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি টাকারও বেশি। জেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর প্রথম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এখন নিয়মিত হচ্ছেন সূর্যমুখী ফুল চাষে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছর জেলার সকল উপজেলায় ৭৮৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন উৎপাদন সুবিধা ও বাজারদর বিবেচনায় বর্তমানে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ দেওয়ায় কৃষকদের তেমন খরচও হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে দুই হাজার কৃষক ১২০ হেক্টর জমিতে হাইসন-৩৩ ও ৬৬৬ হেক্টর জমিতে আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী ফুল চাষ করছেন।
মূলত সূর্যমুখী ফুল থেকে তেলের বীজ সংগ্রহ করা হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে অন্তত ২ টন তেলের বীজ পাওয়া যায়। সে হিসেবে আবহাওয়া ভালো থাকলে এবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ১৫৭২ মেট্রিক টন তেলের বীজ পাওয়া যাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি কেজি তেলের বীজ বাজারে বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ৭৮৬ হেক্টর জমিতে এবার ৭ কেটি টাকারও বেশি মূল্যের তেলের বীজ পাওয়া যাবে। আর এসব বীজ ভাঙিয়ে তেল হবে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ কেজির মতো। ১৫০ টাকা কেজি দরে যার বাজার মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা। যদিও অধিকাংশ কৃষক ঘানিতে না ভাঙিয়ে তেলের বীজ বাজারে বিক্রি করে দেন। এই বীজ থেকে তেলের পাশাপাশি খৈলও পাওয়া যায়। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের গাছও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম ভূইয়া জানান, গত জানুয়ারী মাস থেকে কৃষকরা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের বীজ রোপন শুরু করেন। রোপনের দুই মাস পর গাছে ফুল ফুটে। আর ফোটার পর ফুল পরিপক্ক হতে সময় লাগে আরও অন্তত ১৫দিন।
আগামী এপ্রিল মাস থেকেই কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার বলেন, ‘কৃষকদের সূর্যমুখী ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ দিয়েছি। বীজ রোপনের পর থেকে আমরা নিয়মিত তদারকিও করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার ফলনও ভালো হবে,’
‘অনেক কৃষক নিজেরাই ঘানিতে তেলের বীজ ভাঙায়। আবার অনেকে তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। আশা করছি এবার ৭ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের তেলের বীজ পাওয়া যাবে।’ বলেন তিনি।
বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল গ্রামের কৃষক বাবুল এলাহী জানান, তিনি ৭ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের বীজ রোপষ করেছেন। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ গাছে ফুল ফুটেছে। কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে তেলের বীজ এবং তেল- যেটি বিক্রি করলে লাভবান হবেন, সেটিই বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।
বিজয়নগর উপজেলার নলগরিয়া গ্রামের কৃষক মো. বোরহান উদ্দিন জানান, তিনি চলতি বছর ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। আগে এসব জমিতে তিনি বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন। এবারই প্রথম কৃষি বিভাগের সহায়তায় সূর্যমুখী ফুল চাষ করছেন।
‘এবার ফলন ভালো হলে প্রতিবছরই সূর্যমুখী ফুল চাষ করব,’ বলেন বাবুল এলাহী।
সরেজমিন কয়েকটি সূর্যমুখী ফুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য অবলোকন করতে ভিড় করছেন বাগানগুলোতে। তবে দর্শনার্থীদের জন্য কিছুটা বিড়ম্বনায়ও পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। অনেক দর্শনার্থী বাগান থেকে ফুল ছিড়ে ফেলেন। এজন্য সূর্যমুখী ফুলের বাগানগুলোতে পাহারা বসাতে হচ্ছে কৃষকদের।
সুমন রায় নামে এক দর্শনার্থী জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সূর্যমুখী ফুল বাগানের ছবি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়েছে। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এসব সূর্যমুখী ফুলের বাগানগুলো দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।