বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টারের একটির অনুমোদন, অনুমোদনের অপেক্ষায় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়, আবেদন জমা হয়েছে আরো ১৪টি। দৈনিক ইত্তেফাক থেকে জানা যায়, সংশোধিত বিধিমালা চূড়ান্ত না করেই ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার’ অনুমোদন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় অস্ট্রেলিয়ার মোনাস কলেজের বাংলাদেশে স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমতি দেয়। বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টারের পরিবর্তে শাখা ক্যাম্পাস খোলার সুপারিশ করলেও শেষ পর্যন্ত স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দেওয়াতেই মূলত এই বিতর্ক।
বাংলাদেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এডুকো বাংলাদেশ লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই কলেজের স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করবে। এছাড়া বিএসি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ইউনিভার্সিটি অব ডার্বি এবং সেন্টার ফর ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি কর্তৃক পরিচালিত লন্ডন স্কুল অব কমার্সের স্টাডি সেন্টার পরিচালনার বিষয়ে সাময়িক অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া আবেদন জমা রয়েছে আরো ১৪টির।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের মে মাসে ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বিধিমালার আলোকে ২০টির বেশি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার চালুর আবেদন করে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বিদেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করে ইউজিসির কর্মকর্তারা এবং এই তিনটির পক্ষে মতও দেয়। এছাড়া আরো ১৪টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা রয়েছে।
কিন্তু বিধিমালার দুর্বলতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। বিধিমালায় এমন বেশ কিছু বিধান এমনভাবে ছিল যার সুযোগে যেনতেন বিশ্ববিদ্যালয়ও শাখা খোলার সুযোগ পেত। এ রকম পরিস্থিতিতে তখন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ও স্টাডি সেন্টার চালুর অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরে মন্ত্রণালয় বিধিমালার সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও। ইউজিসির তৎকালীন সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী ও ইউজিসির সচিব মো. খালেদ।
তথ্য অনুযায়ী, ঐ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের কোনো স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেবে না সরকার। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন শুরু হবে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়টি বিবেচনায় এই সংশোধন করা হচ্ছে।
কমিটির সদস্যদের চিন্তা ছিল, স্টাডি সেন্টারের আকার প্রায় কোচিং সেন্টারের মতো। বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের একটি বা হাতেগোনা কয়েকটি কোর্স এখানে পরিচালিত হয়। পরীক্ষা ও কারিকুলাম ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। এক কথায়, শিক্ষার কোনো কাঠামোই থাকে না। অন্যদিকে শাখা ক্যাম্পাসের আকার একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। বোর্ড অব গভর্ন্যান্স থাকে। বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ থাকে। সুযোগ থাকে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার।
প্রস্তাবিত বিধিমালায় যা ছিল
ওয়ার্ল্ড কিউএস র্যাকিংয়ে ৫০০ এর মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শাখা ক্যাম্পাস বাংলাদেশে পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া কোনো কারণে শাখা ক্যাম্পাস বন্ধ হলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস হবে প্রায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ৯ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অনুষদ, পাঠ্যক্রম কমিটি, অর্থ কমিটি, শিক্ষক নিয়োগ কমিটি শৃঙ্খলা কমিটি থাকবে। এছাড়া কর্মকর্তাও থাকবেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। তবে বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাসে প্রধান থাকবেন উপ-উপাচার্য বা ভাইস প্রেসিডেন্ট। এছাড়া ট্রেজারার ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, বিভাগীয় প্রধান, ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা, পরিচালক (অর্থ), জনসংযোগ কর্মকর্তা ও লাইব্রেরিয়ান থাকবে।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজে কোনো শাখা ক্যাম্পাসে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে উপ-উপাচার্য/ভাইস প্রেসিডেন্ট বা ট্রেজারার থাকতে পারবেন না। শাখা ক্যাম্পাস কর্তৃক কনভোকেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে থাকতে হবে এবং সনদপত্রে ভাইস চ্যান্সেলর/প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করবেন। শাখা ক্যাম্পাস বিধিমালা না মানলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে। এছাড়া কোনো শাখা ক্যাম্পাসের সনদ বাতিল হলে কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপন্ন বা ক্ষতিগ্রস্ত বা কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হলে শাখা ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্টদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।