মার্চের শুরু থেকেই দেশে পুনরায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও আজ সহ টানা এক সপ্তাহ যাবৎ গড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৫৩। গত ৩০ মার্চ মারা গেছেন ৪৫ জন, ৩১ মার্চ ৫২ জন, ১ এপ্রিল ৫৯ জন, ২ এপ্রিল ৫০ জন, ৩ এপ্রিল ৫৮ জন ও গতকাল ৫৩ জন মারা গেছেন। করোনার প্রকোপ যে হারে বাড়ছে তাতে চিকিৎসা ব্যয় বহনের সামর্থ্য অধিকাংশ পরিবারেই নেই। পৃথিবীর উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা এমন মহামারিতে এতোটা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েনা। কারন সেসব দেশগুলোর স্বাস্থ্য বীমা এতটাই শক্তিশালী করোনার ধকল বেশিরভাগ তারাই বহন করছে। কিন্তু আমাদের মত রাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
বাংলাদেশে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ‘হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১২-২০৩২’ প্রণয়ন করেছিল সরকার।দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে প্রণীত এই কৌশলপত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা ছিল তাতে। ২০১৩ সালে ওই প্রকল্প শুরুর কথা থাকলেও তার তিন বছর পর টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় এসএসকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে সরকার। ২০১৭ সালে ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলাকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় তিন উপজেলার ৮১ হাজার দরিদ্র পরিবারকে একটি করে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই কার্ড দেখিয়ে ওইসব পরিবারের সদস্যরা ৭৮টি রোগের চিকিৎসা ও ওষুধপথ্য বিনামূল্যে পাচ্ছে। দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে সরকার বছরে এক হাজার টাকা প্রিমিয়াম দেয়। বিনিময়ে প্রতিটা পরিবার বছরে ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা সুবিধা পায়। বেসরকারি হাসপাতালে কোন টেস্ট করা হলে সেই ব্যয়ও এই প্রকল্প থেকে পরিশোধ করা হয়। সফলভাবে পাইলটিং শেষে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার কথা থাকলেও সে বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেই।
বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবীমা গ্রহীতার সংখ্যা খুবই কম। তবে যাদের স্বাস্থ্যবীমা করা আছে, তারা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করলে বীমা সুবিধা পাবেন। কোভিডকেন্দ্রিক নতুন নতুন সেবা চালু করতে বীমা কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করছে ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথরিটি (ইডরা) ও বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশন।
ইডরার চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘বিদ্যমান হেলথ ইন্সুরেন্স কাভারেজের আওতায় কোভিড আক্রান্তরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে তার বীমা সুবিধা পাবেন। তবে কোভিড-১৯কে মাথায় রেখে আলাদা হেলথ ইন্সুরেন্স হওয়া উচিত। শুধু করোনাক্রান্তদের চিকিৎসা কিংবা মৃত্যুই নয়, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের কিডনি, হার্ট ও স্নায়বিক সমস্যা হচ্ছে। এজন্য কোভিকেন্দ্রিক ইন্সুরেন্স প্রোডাক্ট চালু করতে কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করছি আমরা’।
সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোন অগ্রগতি নেই। এমনকি সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরকারিভাবে স্বাস্থ্যবীমা করার একটি উদ্যোগ ছিল। এ বিষয়ে কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হলেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় তা আটকে আছে’।
বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘আমরাও বীমা কোম্পানিগুলোকে কোভিড সংশ্লিষ্ট নতুন প্রোডাক্ট চালুর ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছি। এখন যাদের স্বাস্থ্যবীমা করা আছে, তারা কোভিড আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে বীমা কাভারেজ পাবেন’।
কোভিড আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তিনি বীমা সুবিধা পাবেন কি-না, জানতে চাইলে জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহুরুল হক টিবিএসকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একচুয়ারির মতামত চেয়েছি। দেশে একচুয়ারির সংকট থাকায় আমরা অস্ট্রেলিয়ার একজন একচুয়ারির মতামত নিয়ে থাকি, তিনিই আমাদের গাইডলাইন প্রণয়ন করে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন মতামত পাইনি। তার মতামত ছাড়া এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না’।