বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ হবে এক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ৫০০ কোটি টাকা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে বিএইচবিএফসির ঋণের কিস্তি সোনালী ই-সেবার মাধ্যমে অনলাইনে জমা ব্যবস্থার উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা জানান।
বিএইচবিএফসির ঋণের কিস্তি অনলাইনে জমা ব্যবস্থার উদ্বোধনের ফলে প্রতিষ্ঠানটির কিস্তিসহ সব রকম বিক্রয়যোগ্য ফরমের মূল্য ও সরকার নির্ধারিত ফি এখন যেকোনো স্থান থেকে তাৎক্ষণিক পরিশোধ করা যাবে। এখন সোনালী ব্যাংকের ‘সোনালী ই-সেবা’ পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে গ্রাহকের নিজ অ্যাকাউন্টের টাকা স্থানান্তর, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড অথবা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। জমা পরবর্তীতে জমাকৃত অর্থের তথ্য এবং বিদ্যমান ঋণ স্থিতির তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে অটো জেনারেটেড ভাউচার এবং এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহক জানতে পারবেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে মানসম্মত বাসস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের সর্বস্তরের মানুষের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গৃহহারা মানুষের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে তিনি গুচ্ছগ্রাম পরিকল্পনা হাতে নেন। আমাদের সংবিধানে মানুষের সকল মৌলিক চাহিদা ও অধিকারের সন্নিবেশ করেন। এ চাহিদা পূরণ এবং অধিকারের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তিনি কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি গৃহ নির্মাণে সরকারি পর্যায়ে ঋণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন পুনর্গঠন করেন। এছাড়াও তিনি গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাসস্থান সংস্থানের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকার বর্তমান প্রজন্মের কিংবদন্তি ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতির পিতার গৃহ পরিকল্পনা অনুসরণ করে তা বাস্তবায়নে যুগান্তকারী সব উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বস্তিবাসীর জন্য স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহঋণ, গৃহহীন জনসাধারণের জন্য আশ্রয়ণসহ সকল স্তরের মানুষের জন্য গৃহঋণের সংস্থান করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘মুজিব বর্ষে আমাদের লক্ষ্য, একজন মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না’।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ঋণ সহজীকরণের পথে সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে সেমতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ব্যবসায়িক অর্জন নির্দেশক সকল সূচকে প্রতিষ্ঠানটি অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে জেনে আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। আশা করছি সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। উপযুক্ত গ্রাহক নির্বাচন করে ঋণ প্রদান এবং নিয়মিতভাবে ঋণ আদায়ের সাফল্য বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ভাবমূর্তি সমুজ্জল করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন যখন যাত্রা শুরু করেছিল, এর অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ১১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১১০ কোটি টাকা ছিল। এ বিষয়ে একটি আইন মহান জাতীয় সংসদের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যেটি প্রায় একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায় আইনটি পাশ হলে বিএইচবিএফসির অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা হবে। এ খাতে আমাদের দিন দিন যেভাবে চাহিদা বাড়ছে, সে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমন্বয়ে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ঋণের কিস্তি অনলাইনে জমা ব্যবস্থার প্রবর্তন নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ। এর ফলে গ্রাহক সেবা সহজ এবং দ্রুততর হবে। সোনালী ই-সেবা পদ্ধতি ডিজিটাল বাংলাদেশ প্লাটফর্মে এক অনন্য সংযোজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম। রাজধানীর হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালের দিলকুশা হলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, এসবিএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এবং বিএইচবিএফসি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন, এফসিএ, এফসিএমএ বক্তব্য রাখেন। বিএইচবিএফসি পরিচালনা পর্ষদের সকল পরিচালক এবং করপোরেশন ও সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।