ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ডলার সংকটে এলসি খুলতে আমদানিকারকরা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আন্তঃসীমান্ত ব্যবসায় ধীরগতি তৈরি হয়েছে।
ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো এলসি দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। বর্তমানে চাল ও পেঁয়াজের মতো কিছু ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্যই ব্যাংকগুলো শুধু এলসি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ভুট্টা, খৈল, গুড়সহ গবাদিপশু ও মুরগির খাদ্যের আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া পাথর, কয়লা, চুনাপাথর ও ধাতব সামগ্রী আমদানিও ডলার সংকটে অনেকাংশে বন্ধ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে ডলারের মূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে সম্প্রতি সারা দেশে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এ অবস্থায় স্থলবন্দর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। গত অক্টোবর মাসের শেষ থেকে ব্যাংকে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষ থেকে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংক আমাদের এলসি খুলতে দিচ্ছে না।
আমদানিকারক মোস্তাক বলেন, গত বুধবার দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা, পাঁচবিবি ও জয়পুরহাটের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে এলসি খোলার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছি। কোনো ব্যাংকই রাজি নয় এলসি খোলার জন্য।ব্যাংকগুলো বলছে, এলসি খোলার ক্ষেত্রে উপর থেকে কোনো অনুমতি নেই। তাদের অনুমতি নিয়ে এলসি খুলতে হয়।
হিলি স্থলবন্দরের আমাদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ বলেন, কয়েক দিন আগে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ভারতীয় প্রায় ৩০০-৪০০ ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও এখন তা ২০০ ট্রাকের নিচে নেমে এসেছে। দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে বন্দরের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সব ধরনের পণ্য আমদানি করে থাকে। তবে ইদানিং ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিলাসবহুল পণ্য নিরুৎসাহিত করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস (চাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, গোখাদ্য, মৎস্য খাদ্য) আমরা শর্ত সাপেক্ষে আমদানি করতে পারব।
এরই মধ্যে আমাদের এই শর্তে এলসি চলমান রয়েছে। আগে যেসব পণ্য বেশি পরিমাণে বাংলাদেশে আসত সেগুলো এখন আসছে না। কারণ অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছেন। এরই মধ্যে তারা গম আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে, চিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমাদের যদি ১০টি এলসি দরকার হয়, তবে ব্যাংকগুলো মাত্র ২টি ছাড় দিচ্ছে। বাকিগুলো হচ্ছে না। হিলি স্থলবন্দরে ব্যবসা ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার বায়জিদ হোসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে ভারত থেকে ৯৫ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ ভাগ বাড়তি করে হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর। বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২৪১ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে বন্দর দিয়ে ৬ লাখ ৬৪৪ টন পণ্য আমদানি হয়। এতে করে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের চার মাসে বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৪০৩ টন পণ্য কম এসেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণ কমবে। বন্দরে রাজস্ব আহরণ নির্ভর করে পণ্য আমদানির ওপর। তবে ডলারের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি দিচ্ছে না। যে কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি কমে যাচ্ছে।