আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জীবনে দুর্দশা নেমে এসেছে। দাতব্য সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইডের এক গবেষণায় চলতি বছরের ১০টি দুর্যোগের ঘটনা চিহ্নিত করেছে যেগুলোর প্রতিটির কারণে ১৫০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খবর বিবিসির।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আইডা এবং জুলাইয়ে ইউরোপে আকস্মিক বন্যার কারণে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। অনেক দরিদ্র এলাকায় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বহু মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এবং বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
যদিও আবহাওয়াজনিত প্রতিটি দুর্যোগই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় তবুও বিজ্ঞানীরা এগুলোর মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার বিষয়ে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠেছেন।
ফ্রেডরিক অত্তো নামের এক শীর্ষ গবেষক চলতি বছরের শুরুতে এক টুইট বার্তায় বলেন, মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা আরও বাড়ছে এবং এই সমস্যা আরও প্রকোট আকার ধারণ করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় এবং ঘুর্ণিঝড় বেড়ে যাওয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তার আরও বেশি বেশি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। হারিকেন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের সঙ্গে জলবায়ুর যে সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয়ে গবেষকরা বলেন, তাদের তীব্র আত্মবিশ্বাস রয়েছে এ বিষয়ে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দায়ী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আইপিসিসির ওই মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আইডা আঘাত হানে। ক্রিশ্চিয়ান এইডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আইডা ছিল চলতি বছর আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় যার ফলে দেশটির অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খায়।
ওই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লুইসিয়ানার লাখ লাখ মানুষকে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। আইডার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য এবং শহরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
নিউইয়র্কে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রথমবারের মতো জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় আইডার আঘাতে ৯৫ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৬ হাজার ৫শ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত জুলাইয়ে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে আকস্মিক বন্যার ঘটনা ছিল বছরের দ্বিতীয় সবচেয়ে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা। সে সময় বিভিন্ন দেশে বন্যায় প্রাণ হারায় ২৪০ জন। অপরদিকে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩শ কোটি ডলার।
ওই গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত এসব দেশে বীমা দাবি থেকে আর্থিক ক্ষতি অনুমান করা সহজ এবং সেখানকার লোকজন নিজেদের বাড়ি এবং ব্যবসার বীমা করে থাকে। অনেক দরিদ্র দেশেই সাধারণত এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না।
এদিকে দক্ষিণ সুদানে চলতি বছর বন্যায় ৮ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। অপরদিকে গত মে মাসে ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় তাউকতে। সরাসরি এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে বাঁচতে ২ লাখ মানুষকে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে।