ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আমদানি দায় কমাতে নানা উদ্যোগের পরও কাটছে না ডলার সংকট। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ আরও কমে ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগের দিন যা ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের ৩ জুন রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ানোর পর আর এর নিচে নামেনি। যদিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে আইএমএফের হিসাব বিবেচনায় নিলে রিজার্ভ এখন ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমছে। আবার আগের দায় পরিশোধ করতে ব্যাংকগুলো ধরনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। যে কারণে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রি ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। আগের দিন বিক্রি ছিল ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তার আগের দিন ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে মোট বিক্রি করল ৬০৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে যেখানে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। আর গত জুন শেষে ছিল ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে জোগান দেওয়া ৮ বিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছে আইএমএফ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাতে সম্মতি দিয়েছে। সে বিবেচনায় দেশের রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
ডলার বিক্রি বাড়ালেও সংকট না কাটায় ডলারের দর কমছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ৯৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। আর আন্তঃব্যাংকে গতকাল প্রতি ডলার সর্বনিম্ন ১০২ টাকা ৪৮ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০৪ টাকায় বিক্রি হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলার বিক্রি করত ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। ডলারের আন্তঃব্যাংক দর হিসেবে যা প্রচার করা হতো। মূলত সরকারের সার, জ্বালানি, জরুরি খাদ্যপণ্য আমদানির বিপরীতে এ ডলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কারণে ব্যবসায়ীদের অনেকে ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারার কথা বলছেন।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বিভিন্ন পদক্ষেপের পর নতুন এলসি কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স কমছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমার পর অক্টোবরে কমেছে আরও ৮ শতাংশ। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমার পর অক্টোবরে কমেছে আরও ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। চলতি মাসের ২৫ দিনে ১৩৫ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স এসেছে। অথচ দেশের বাইরে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে শ্রমিক গেছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার। ২০২১ সালে যেখানে গিয়েছিল মাত্র ৬ লাখ ১৭ হাজার। শ্রমিক যাওয়া এভাবে বাড়লেও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমছে।