ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর দেশের শেয়ারবাজারে আবারও প্রাণ ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই বেড়েছে মূল্যসূচক। একইসঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে।
বিভিন্ন ইস্যুতে শেয়ারবাজারে লাগাতার পতন হলে গত চার বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রথমবার ২০২০ সালে মার্চে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করলেও তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের জুলাইয়ে।
এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আবারও ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এ পর্যায়ে শেয়ার লেনদেন ব্যাপক কমে গেলে সমালোচনায় পড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সম্প্রতি ফ্লোর প্রাইস নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম ধাসে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান বাদে সবগুলোর ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
এরপর শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা দিলে ২১ জানুয়ারি আরও ২৩ প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে গত ০৬ ফেব্রুয়ারি আরও তিন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে জানানো হয় আরও তিন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সময়।
প্রথম দফায় ফ্লোর প্রইস তুলে নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে ধীরে ধীরে সেই পতন থেকে বেরিয়ে এখন টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই বেড়েছে মূল্যসূচক। একইসঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে লেনদেন।
এতে গত সপ্তাহে একাধিক কার্যদিবসে ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। একইসঙ্গে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে উঠে এসেছে। এক সপ্তাহেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে আড়াই শতাংশের বেশি। বাজার মূলধন বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। আর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৮৪ শতাংশের বেশি।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৪০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৮টির। আর ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৫৯ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫৭ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ বা ২ দশমিক ১৭ পয়েন্ট।
এছাড়া, ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ২৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১০ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেশ বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৯৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৭৭৮ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার ৪৭৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৪ হাজার ৫৮৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩ হাজার ৮৯০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
ডিএসইতে সপ্তাহজুড়ে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৯২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, আইএফআইসি ব্যাংক, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ফরচুন সুজ, মালেক স্পিনিং এবং ইভেন্স টেক্সটাইল।