ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বগুড়ার বাজারে কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ ক্রেতাদের।
বুধবার দুপুরে বগুড়ার খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে প্রায় সব সবজির দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল কয়েক দিন আগে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। হঠাৎ করে আবারো মরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম বেড়েছে।
বগুড়ার পাইকারি রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার ও খুচরা খান্দার বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, লাল পাকরি ও কার্টিনাল আলু মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, আদার কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, রসুন মানভেদে ২০০ থেকে ২১০, বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মিষ্টিলাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ঢেরস ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, ফুলকপি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বেচাবিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা, দেশি মুরগী ৪৮০ টাকা, বয়লার মুরগী ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগী ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা, ইলিশ ৬০০-৮০০ গ্রামের ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা, আকার ভেদে রুই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল মাছ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, সিলভার কার্প মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩০০-৩৫০, টেংরা ৩২০-৪৬০, শিং মাছ ২৫০-৬০০ টাকা, বাটা মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, ব্রিগেড মাছ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়াও, চালের বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় বেশি দামেই বেচাকেনা হতে দেখা গেছে। গেল কিছু দিনের তুলনায় ফতেহ আলী বাজারে প্রতি কেজি বিআর, রঞ্জিত, কাটারিভোগ, মিনিকেট ৫ থেকে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের খুচরা খান্দার বাজারে সবজি কিনতে আসা আজিজ মোল্লা, খলিল মিয়া, বুলবুল হোসেনসহ একাধিক ক্রেতা জানান, বাজারে প্রায় সব সবজির দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। কাঁচা মরিচের দাম আরোও বাড়তি। বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সাধারণ ক্রেতাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকা কঠিন। অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টিসহ দেশে নানা অজুহাতে শুধু কাঁচা মরিচ নয় সব সবজিরই দাম বেড়েছে। দেশে কোনো ছোট-খাটো দুর্যোগ বা সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হলেও সবজির দাম বেড়ে যায়। এভাবে সব জিনিসের দাম দফায় দফায় বাড়লে বাজার করাই আমাদের কঠিন হয়ে পড়বে।
কাঁচা মরিচ বিক্রেতা সোহেল রানা জানান, সবজির দামের সাথে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনে আনছি, তা থেকে কেজি প্রতি দুই-তিন টাকা লাভ করে বিক্রি করছি।
পাইকারি রাজা বাজারের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা আশিক আহম্মেদ জানান, গেল কয়েকদিন বৃষ্টির ফলে কাঁচা মরিচের গাছ অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশি কাঁচা মরিচের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে আগের তুলনায় বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে।
সবজি ব্যবসায়ী মনসুর আলম, কিবরিয়া শেখ জানান, বাজারে সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। বর্তমানে কাঁচা মরিচের দাম অনেক বেশি। বৃষ্টির কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে মরিচের আবাদ নষ্ট হয়েছে। পরিস্থিততি স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে। তিনি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, আলু ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, আদা ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। গেল কয়েকদিন আগে বেগুন বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা কেজিতে। তবে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদুর রহমান জানান, জেলায় খরিপ মৌসুমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ৮২০ হেক্টর জমিতে। গেল কয়েকদিনের অধিক বৃষ্টির কারণে মরিচ গাছ কিছুটা নষ্ট হয়েছে। যার প্রভাব হয়তো বাজারে পড়েছে। তবে অন্যদিকে অন্যান্য সবজির আমদানি বাড়ার সাথে সাথে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
তিনি জানান, গেল বছর রবি মৌসুমে জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। এ বছরের টার্গেট এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৫০ হেক্টর বেশি জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষাবাদ হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ও জমি ফাঁকা হওয়া মাত্রই একযোগে চাষাবাদ শুরু করে পূর্ণ লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যবে চাষিরা। তবে গেল বছরের তুলনায় কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।