ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বিদায়ী বছরের মতো ২০২৪ সালে সরকারের সামনে তিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। তার মতে চ্যালেঞ্জগুলো হলো- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময় হার এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়।
বৃহস্পতিবার ‘বছর শুরুর ভাবনা: বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে?‘ শীর্ষক অনলাইন পাবলিক লেকচারে তিনি এ কথা বলেন।
আতিউর রহমান বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। যদিও কিছুটা কমেছে। তারপরও এখনো ৯-এর আশপাশে আছে। আগামী ছয় মাস এ মূল্যস্ফীতি থাকতে পারে। মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রয়োজনে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে, যাতে পণ্য আমদানি ব্যয় কমে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ডলারের বিনিময় হার। এখনো অনিয়ন্ত্রিত ডলারের মূল্য। এ জন্য বিনিময় হার একটি বান্ডিলের মধ্যে আনতে হবে। সুদের হারের মতো বিনিময় হারও একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে। যাতে আগামীতে বিনিময় হারে অস্থিরতা কমে আসে।
তৃতীয় চ্যালেঞ্জ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি। প্রতি বছরে বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে কিন্তু সে হারে আয় দেশে আসছে না। দুটি কারণে প্রবাসী আয় আনা যাচ্ছে না। তা হলো, আমরা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারছি না। এ জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে পাঠাতে হবে, যাতে তারা তুলনামূলক বেশি আয় করতে পারে।
আতিউর রহমান বলেন, প্রবাসী আয়ের ডলারের মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে; প্রণোদনা বাড়াতে হবে। প্রবাসীদের সম্মাননা দিতে হবে। বিমানবন্দরে তারা যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যাতে তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধ ভাবে দেশে প্রবাসী আয় পাঠাতে পারে।
তিনি বলেন, বিদেশে থেকে প্রবাসীরা যখন ফিরে তখন অনেকের হাতে কোনো অর্থ থাকে না। প্রয়োজনে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কোনো কাজে নিয়োজিত করতে হবে। এ জন্য সরকারের এ সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের শেষের দিকে রপ্তানি কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে পুরো বছরে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে পুরাতন বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন বাজারে মনোযোগ দিতে হবে। মনোযোগ দিতে হবে পণ্যের বহুমুখীকরণের দিকে। রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর বলেন, দেশে যে অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পদ্মা সেতু, চট্টগ্রামে টানেল ও রাজধানীতে মেট্রোরেলের মাধ্যমে যে উপযোগিতা তৈরি হয়েছে, জিডিপিতে ইতোমধ্যে এক থেকে দেড় শতাংশ যোগ হয়েছে। রাজধানীতে মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, পুরোপুরি কাজ শুরু করলে ঢাকার বার্ষিক মোট উৎপাদনের (ঢাকার জিডিপি) ১২ থেকে ১৩ শতাংশ বেড়ে যাবে। এখন সময় এসেছে এগুলো সঠিক ভাবে কাজে লাগানো।
শিক্ষাখাতে পুরোপুরি সফলতা আনা যায়নি। শিক্ষা শেষে কাজে নিয়োজিত হওয়া যায় না, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে করণীয় কী- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন নীতি গ্রহণের সময় পূর্বের নীতি কেন কাজ করল না, তা রিভিউ করতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট কর্মমুখী নয়। যে কারণে শিক্ষিত হওয়ার পরও বিপুল সংখ্যক মানুষ বেকার থাকে। এ সব মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হতে হবে, লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান হয়। প্রয়োজনে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে করে করে কারিকুলাম তৈরি করতে হবে।
দেশের ব্যয়ের ক্ষেত্রে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রাখার তাগিদ দেন আতিউর রহমান। তিনি বলেন, ৫০ বছরে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো পুরো বদলে গেছে। স্বাধীনতা উত্তর জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৫০ শতাংশ, উৎপাদন খাতের অবদান ছিল ১৩ শতাংশের মতো। ৫২ বছর পর তার উল্টো হয়েছে। মাতৃমৃত্যু হারে উন্নতি হয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি হয়েছে। উন্নত মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।