ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ধারাবাহিক ভাবে কমছে। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্তও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর (ডেপুটি গভর্নর ১) কাজী ছাইদুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ ও মো. নাছের ও সাজেদুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে ডলার সংকট চলাকালে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা নভেম্বরে পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে তা নির্ভর করছে ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত পরিপালনের ওপর। তাই সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব বিষয়গুলো আলোচনায় তুলেছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা।
বেশ কিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। গত ফেব্রুয়ারিতে এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার পায় বাংলাদেশ। দেশে ডলার সংকট চলাকালে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা নভেম্বরে পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে তা নির্ভর করছে ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত পরিপালনের ওপর। তাই সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব বিষয়গুলো আলোচনায় তুলেছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা।
শর্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে প্রকৃত (নিট) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুই হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার থাকার কথা ছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সেই শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ।
বৈঠকে থাকা কর্মকর্তারা জানান, প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, রিজার্ভের যে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা চেষ্টা করেও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ জন্য রিজার্ভের শর্তে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করে আইএমএফ। তবে গভর্নর না থাকায় ভারপ্রাপ্ত গভর্নর এ বিষয়ে একমত বা দ্বিমত পোষণ করেননি। একপর্যায়ে রিজার্ভের বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা ২৫ বিলিয়ন থেকে কিছুটা কমানোর (আগামী ডিসেম্বর ও মার্চের জন্য) ইঙ্গিত দেয় আইএমএফের প্রতিনিধি দল।
আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে পূর্বের শর্ত অনুযায়ী বৈঠক করছেন সংস্থাটির সদস্যরা।
রিজার্ভ, বাজারভিত্তিক ডলারে রেট, ঋণ খেলাপি, রাজস্ব সংস্কার এবং তারল্য ব্যবস্থাপনাসহ ৪৭টি শর্তে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয় আইএমএফ। সংস্থাটির দেওয়া অধিকাংশ শর্ত পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু রিজার্ভে উন্নতি, কর–জিডিপি অনুপাত, এবং বাজারভিত্তিক ডলার রেট করতে ব্যর্থ হয়।
আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল জুনে প্রকৃত রিজার্ভ দুই হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে তা দুই হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ৬৮০ ডলার রাখতে হবে। আর সেখান এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে ১৮ বিলিয়নের নিচে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে আমাদের রিজার্ভের লক্ষ্য ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আইএমএফ মনে করে যে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেবে সংস্থাটি।
এদিকে, বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টালিজেন্ট ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। কিন্তু বিশেষ কারণে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি। এ জন্য তার বিষয়গুলো নিয়ে আইএমএফ কোনো প্রশ্ন করেননি।
রিজার্ভ (০৪ অক্টোবর) কমে হয়েছে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি (২৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন) ডলার। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের রিজার্ভ দুই হাজার ১০৫ কোটি (২১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন) ডলার।
তবে তার কাছ থেকে কী ধরনের তথ্য জানতে চাওয়া হতে পারে? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএফআইইউয়ের কার্যক্রম ও দেশের অর্থ পাচার রোধে সংস্থাটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে। আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশদ আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
২০২১ সালের অগাস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল চার হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ (০৪ অক্টোবর) কমে হয়েছে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি (২৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন) ডলার। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের রিজার্ভ ২ হাজার ১০৫ কোটি (২১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন) ডলার।
এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। এ হিসাবটি প্রকাশ করা হয় না।
আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার। গত দুই বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি বা এক বিলিয়ন ডলার করে কমেছে।