ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগ পাথর আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করায় চার দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায় পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বন্দরটি স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার দুপুরে স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, কদিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি নেই। পুরো বন্দরজুড়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। অলস সময় পার করছেন শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঢিলেঢালা ভাবে চলছে ইমিগ্রেশনে যাত্রী পারাপার। শ্রমিকদের তেমন কাজ করতে দেখা যায়নি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১ আগস্ট থেকেই বন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। বন্দরটি পাথরের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় পাথর আমদানি না হওয়ায় অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও হাজারো শ্রমিক। বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
স্থলবন্দরের পাথর ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, বাংলাদেশ কাস্টমস বিদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টনে ১৩ ডলার রাজস্ব নির্ধারণ করেছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের আগের থেকে ৫০ টাকা হারে বেশি রাজস্ব দিতে হবে। এই হারে রাজস্ব বাড়ায় লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। তাই বাড়তি শুল্ক হার প্রত্যাহারের দাবিতে ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন তারা।
আহসান হাবিব নামে এক পাথর ব্যবসায়ী জানান, গত ১২ জুলাইয়ের পর থেকে ভারত ও ভুটানের মাঝে স্লট বুকিং ফি বাবদ চলা দ্বন্দ্বে ২২ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাথর আমদানি চলে। ১ আগস্ট থেকে শুল্ক-কর বৃদ্ধির কারণে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় দেশের এই চার দেশীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরটি। এদিকে প্রায় এক মাস ধরে ভুটানের পাথর আসা বন্ধ রয়েছে।
স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, দিন দিন আমাদের এ বন্দরটিতে নতুন নতুন সমস্যায় বিপাকে পড়েছে শ্রমিকরা। গত ১২ জুলাই থেকে ভুটানের পাথর আসছে না। তার মধ্যে শুল্ক-কর বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবিতে পাথর ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে ১ আগস্ট থেকে একেবারেই পাথর আসছে না। দ্রুত বিষয়টি সমাধান না হলে শ্রমিকদের বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। শ্রমিকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষাসহ বন্দরটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শ্রমিক নেতারা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুল্ক কর বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় পাথর ও স্লট ফি বৃদ্ধির কারণে ভুটানের পাথর বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফি বৃদ্ধির কারণে আমাদের পাথর আমদানিতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই বাড়তি ১ ডলার অ্যাসেসমেন্ট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, পূর্বের আমদানিতে টন প্রতি ১২ ডলার অ্যাসেসমেন্ট গ্রহণ করা হলেও নতুন করে সরকারি নির্দেশে গত ১ আগস্ট থেকে প্রতি টনে ভ্যালু এক ডলার বৃদ্ধি করে ১৩ ডলার করা হয়েছে। এতে করে ভ্যাটের পরিমাণ বেড়ে ৪১ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন বলেন, গত ১ আগস্ট থেকে শুল্ক বিভাগ অ্যাসেসমেন্ট কর এক ডলার বাড়ানোর কারণে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। শুধু বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর না, একই অবস্থা শুরু হয়েছে বুড়িমারী, ভেমরা, সোনামসজিদ ও হিলি স্থলবন্দরেও। আমরা সকল বন্দর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাদের নিয়ে এ বিষয়ে শুল্ক বিভাগের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করবো।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর। বন্দরটি পাথরের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার এখান থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। তবে চলমান সমস্যায় চলতি অর্থবছরের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা থেকে পিছিয়ে পড়ছে সরকার। আশা করি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।