অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: গত ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মিলনায়তে ‘Development of a solar based electricity model for public universities of Bangladesh and its advocacy for solar PV electricity promotion’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালকরা (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আমন্ত্রণক্রমে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে চারটির মধ্যে প্রথম প্রেজেন্টেশনটি ছিল- ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ওপেক্স মডেলে রুফটপ ও গ্রাউন্ডে অব্যহৃত পরিসরে সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়ন’ পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে কমবেশি ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটের ওপর তাদের চাহিদার ২০ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এনার্জি অডিট প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক অপর একটি প্রেজেন্টেশনে দেখানো হয়, এনার্জি ব্যবহারে দক্ষতা ও সংরক্ষণ উন্নয়ন কৌশল যথাযযথভাবে গৃহীত হলে অনেকাংশে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি সাশ্রয় হয়। যথাযথভাবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে শিক্ষার্থীরাও দেশ-বিদেশের উপযোগী স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এনার্জি অডিটর হয়। উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ব্যাচে কমবেশি ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে দুই ব্যাচ শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে এনার্জি অডিট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্বারা করানো এক এনার্জি অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এক ভবনে বাতি ও এসিতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ যথাক্রমে ৩৮.৬১% ও ৬৮.৬১% সাশ্রয় করা সম্ভব। অত্র প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরে এনার্জি অডিটের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ উন্নয়নের ভিত্তিতে বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে এবং অপচয় রোধ করে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা ও সংরক্ষণ উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের গ্রিডবিদ্যুৎ চাহিদা অনায়াসে কমবেশি ৩০ শতাংশ কমাতে পারবে। তাতে আনুপাতিক হারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি চাহিদা কমবে এবং জ্বালানি আমদানি ব্যয় হ্রাসে ডলার সাশ্রয় হবে।
‘অফ-গ্রিড/অন-গ্রিড ডিসি/এসি সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট (সিস্টেম) পারফরমেন্স স্ট্যাডি’ ছিল অপর আর একটি প্রেজেন্টেশন। তাতে বলা হয়, প্রস্তাবিত উল্লিখিত মডেলটি ভ্যালিডেশনের জন্য ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ kWp উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্লান্টে স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন অন-গ্রিড এসি, অফ-গ্রিড এসি ও অফ-গ্রিড ডিসি সোলার সিস্টেমের পারফরমেন্স অনুশীলন করা হচ্ছে। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য সৌরবিদ্যুৎ প্লান্টের প্ল্যান, ডিজাইন, নির্মাণ এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ স্টোরেজের জন্য যে নতুন প্রযুক্তি বাজারে আসছে, পরিবেশ এবং আর্থিক বিবেচনায় তা ভোক্তাবান্ধব হবে।
বর্তমানে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের গ্রাহকরা ডিসি সোলার সিস্টেম থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এ সিস্টেম তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ক্রয় করে। করোনাকালে আর্থিক বিপর্যয় ও পরবর্তীতে মূল্যস্ফীতির শিকার হওয়ায় তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ অব্যাহত রাখতে পারেনি। ইডকল-এর ঋণে যারা সোলার সিস্টেম ক্রয় করে, তাদের ঋণের অপরিশোধিত অংশ ৩০৬.৪১ কোটি টাকা সরকার মওকুফ করে।
দেশব্যাপী ধান ও মাছ চাষে সেচের পানি ব্যবহারকারী গ্রাহকদের কাছ থেকে বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মূল্যহারে বিল আদায় করা হতো। সেচে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এসব গ্রাহকের গ্রিডবিদ্যুৎ সংযোগে রেখে তাদের কাছ থেকে শিল্পে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মূল্যহারে ইউটিলিটিরা বিইআরসি আইন উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ বিল আদায় করছে। ক্যাবের পক্ষ থেকে আপত্তি দিয়েও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। পরিশেষে, জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্যাব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।
আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ এখন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। ভারতে এখন সৌর ও বায়ু- উভয় বিদ্যুতের মূল্যহার কমবেশি ৩ রুপি (১ ডলার = ৮৫ রুপি)। ভারতের পরিকল্পনায় ২০৩০ সালে সৌরবিদ্যুতের মূল্যহার হবে ১.৯-২.৬ রুপি এবং বায়ু বিদ্যুতের মূল্যহার হবে ২.৩-২.৬ রুপি। ওপেক্স মডেলে ৩.৫ মেগাওয়াট রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করেছে এবং ডেভেলপারের সঙ্গে গত ৮ জুলাইয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো এক দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল, ‘সৌরবিদ্যুৎ কেনার চুক্তিও হচ্ছে উচ্চমূল্যে’। খবরে বলা হয়: টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগ্রহী।
সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়হার বা মূল্যহার বাংলাদেশ অপেক্ষা ভারতে এত কম হওয়ার কারণ, ভারতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সৌরবিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়। অথচ বাংলাদেশে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন ২০১০ অনুযায়ী বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দিয়ে একটি পূর্বনির্ধারিত মূল্যহার অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে প্রতিযোগিতা আইন ২০১২-এর ধারা ১৫ ও ১৬ লঙ্ঘন হয় এবং সৌরবিদ্যুৎ বাজার ওলিগোপলির শিকার হয়েছে এবং উৎপাদনে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় সমন্বয় করে নির্ধারিত অন্যায় ও অযৌক্তিক মূল্যহারে সরকার সৌরবিদ্যুৎ ক্রয় করে বিনিয়োগকারীকে লুণ্ঠনমূলক মুনাফা লাভের সুযোগ দেওয়ায় অসাধু সৌরবিদ্যুৎ ব্যবসার প্রসার ঘটেছে।
লুণ্ঠনমূলক ব্যয়বৃদ্ধি দ্বারা এমন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ও উৎপাদন ব্যয়হার বৃদ্ধি বিবেচনায় না নিয়ে আমরা যদি উন্নয়ন বলি, তাহলে বলতেই হবে- এ উন্নয়ন লুণ্ঠনমূলক অসাধু ব্যবসাবান্ধব, কোনো ভাবেই ভোক্তাবান্ধব নয়। কাঠামোগত ভাবে সৌরবিদ্যুৎ বাজার এখন মনোপলি/ওলিগোপলির শিকার। সৌরবিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ ও মূল্যহারে সৌরবিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি প্রতিযোগিতা আইন ২০১২-এর ধারা ১৫ ও ১৬ অনুযায়ী প্রতিযোগিতাবিরোধী এবং সেই সঙ্গে কর্তৃত্বময় অবস্থানের পরিপন্থী। সৌর বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণে বিদ্যুৎ বিভাগ তার কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার করে। ফলে ভোক্তারা জ্বালানি সুবিচার বঞ্চিত ও লুণ্ঠনমূলক মুনাফার শিকার হন। এই একই পরিস্থিতি বছরের পর বছর ধরে গ্রিডবিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা, তরল জ্বালানি, এলপিজি ও এলএনজি উৎপাদন/আমদানি, সঞ্চালন/পরিবহন, বণ্ঠন ও বিতরণে বিরাজ করছে। এ অবস্থার প্রতিকারে ক্যাব সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছে।
কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিরা বলে থাকেন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় সৌরবিদ্যুতের মূল্যহার বাংলাদেশে অনেক বেশি। তার অন্যতম কারণ জমির স্বল্পতা ও মূল্য অনেক বেশি। অথচ নেটমিটারিং সোলার রুফটপ প্রযুক্তিতে ওপেক্স মডেলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ ৭.৫০ টাকা মূল্যহারে করা যায়। আবার মূল্যহার নির্ধারণ প্রতিযোগিতামূলক হলে তার কমেও সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। বর্তমানে ক্যাপেক্স (ভোক্তার নিজস্ব বিনিয়োগে) মডেলে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী চাহিদার একটি নির্দিষ্ট অংশ রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা থাকতে হয়। এ বিধান মতে, ইতোমধ্যে ৩৫০ মেগাওয়াট রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলেও এ ক্ষমতা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো কাজে আসেনি। বরং এ বিধান সোলার সিস্টেমের নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের বাজার সৃষ্টি করে লুণ্ঠনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির নামে বছরে শত শত কোটি টাকা ভোক্তা ও সরকারের পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। এ টাকা ডলার হয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এভাবে সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়ন ভোক্তাবান্ধব নয়, অসাধু ব্যবসাবান্ধব।
বলা হয়, সরকার সৌরবিদ্যুতের মূল্যহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে তা ফলপ্রসূ হতে হলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় রোধ করতে হবে। সেজন্য নিম্নের প্রস্তাবগুলো সরকারের গ্রহণ করা প্রয়োজন:
১) ২০৩০ সালের আগে পিডিবিসহ কোনো ইউটিলিটি নিজে কিংবা আইপিপির আওতায় বা অন্য কোনো বিনিয়োগ কৌশলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না বা অংশ নেবে না,
২) বিদ্যুৎ বিভাগ সৌরবিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ করা থেকে বিরত থাকবে, সৌরবিদ্যুতের বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হতে হবে, প্রয়োজনে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) আইন ২০১২-এর ধারা ৬(১৭) অনুযায়ী বিইআরসি সৌরবিদ্যুতের সর্বোচ্চ ও নিম্ন মূল্যহার নির্ধারণ করে দেবে, তাহলেই সে মূল্যহার স্বার্থসংঘাতমুক্ত হবে,
৩) ভোক্তা শ্রেণি নির্বিশেষে সারা দেশে রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা অবিলম্বে প্রাক্কলন হতে হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি, আধা সরকারি, স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভোক্তা পর্যায়ে সম্ভাব্য ০.৫ মেগাওয়াট থেকে তদূর্ধ্ব রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা শতভাগ উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ গৃহীত হতে হবে; বেসরকারি ও ব্যক্তি ভোক্তা শ্রেণিকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা যেতে পারে; এক্ষেত্রে স্রেডার ভূমিকা হবে অনেকটা এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের অনুরূপ,
৪) ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত সব পর্যায়ের শহর, বন্দর, রেলস্টেশন ও গ্রামীণ হাটবাজারে ওই কার্যক্রমের আওতায় সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়ন শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে,
৫) ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রামীণ যানবাহন, সেচ, ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প, গ্রামীণ দোকানপাট, আইপিএস ও লাইফ-লাইন গ্রাহকদের ব্যবহৃত গ্রিডবিদ্যুৎ এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুতের একটি বড় অংশ সৌরবিদ্যুৎ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে হবে,
৬) সব অফ-গ্রিড অঞ্চলে ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হতে হবে,
৭) ২০৩০ সালের মধ্যে লুণ্ঠনমুক্ত সৌরবিদ্যুৎ ও গ্রিডবিদ্যুৎ বাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিবেশ ও ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত হতে হবে এবং
৮) সর্বোপরি সৌরবিদ্যুৎ টপডাউন নয়, বটোমআপ অ্যাপপ্রোচে উন্নয়ন হতে হবে।
ভোক্তাবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়ন স্বার্থসংঘাত যুক্ত। তাই এ উন্নয়নে সরকারের পক্ষে ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করা কঠিন। ফলে ভোক্তাবান্ধব সৌরবিদ্যুৎসহ গ্রিডবিদ্যুৎ উন্নয়নে ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুবসমাজের সক্ষমতা উন্নয়ন এবং তাদের ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্যাব এক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইউজিসির ওই অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনাও উপস্থাপিত হয়।
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ উন্নয়নে গ্রিডবিদ্যুৎ চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে উৎপাদনক্ষমতার ব্যবহার আরও হ্রাস পাবে। ফলে চাহিদার সঙ্গে গ্রিডবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতার অব্যাহত সামঞ্জস্যহীন বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। আবার গ্রিডবিদ্যুৎ অপেক্ষা অধিকতর কম মূল্যহারে সৌরবিদ্যুৎ প্রাপ্তি দেশব্যাপী সর্বস্তরের ভোক্তাদের জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিনিয়োগকারীদের আয় বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে ওইসব বিনিয়োগকারী নবায়নযোগ্য জ্বালানি তথা সৌরবিদ্যুৎ বাজার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নেপথ্যে অতিতে বড় বাধা হয়ে ছিল, এখনো বাধা হয়ে আছে এবং ভবিষতেও থাকবে। তাই এই বাধা অপসারণে দেশব্যাপী এখন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।
লেখক: ডিন, প্রকৌশল অনুষদ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জ্বালানি উপদেষ্টা, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সৌজন্যে, খবরের কাগজ।