ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: অনিয়ম-দুর্নীতি করলে কিংবা পরিচালনায় ব্যর্থ হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে নতুন করে কমিটি গঠন করবে সরকার। শুধু তাই নয়, অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিলে নতুন করে প্রতিষ্ঠান প্রধানও নিয়োগ দেওয়া হবে। এমন বিধান রাখা হয়েছে শিক্ষা আইনের খসড়ায়।
আর সরকারি নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হলে এমপিওভুক্তি, পাঠদানের অনুমোদন, অধিভুক্তি ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়াটি সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আইন কার্যকর হলেই বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ করেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি, আর্থিক অপচয় ও ভর্তি বাণিজ্য ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। আইনে এই বিধান যুক্ত করায় কমিটি বাদ নতুন কমিটি গঠন বা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বাদ দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ করলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। তখন সারাদেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যায়ে বলা হয়েছে, কোনও কোনও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা পরিচালনা কমিটি’র (যে নামেই ডাকা হোক) অনিয়ম, দুর্নীতি বা কোনও ব্যর্থতার কারণে উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে সরকার নতুন করে প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা পরিচালনা কমিটি কিংবা উভয়ই নিয়োগ দিতে পারবে।
খসড়ায় বলা হয়, কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও আইনবিরোধী যেকোনও কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকলে অথবা সরকারের কোনও বৈধ আদেশ পালনে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে সরকার উক্ত প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ পাঠদানের অনুমতি, অধিভুক্তি স্থাপনের অনুমতি পরিচালনা সনদ এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করতে পারবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়, বিনা অনুমোদনে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে সরকার যেকোনও সময় উক্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে পারবে।
শিক্ষা আইনের খসড়ায় কমিটির এখতিয়ার অংশে বলা হয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটি বা ক্ষেত্রমতো পরিচালনা কমিটি বা কমিটির চেয়ারম্যান বা সভাপতি নির্ধারিত এখতিয়ার বা কার্যপরিধির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন প্রশাসনে বা পাঠদানে হস্তক্ষেপ বা এখতিয়ার প্রয়োগ করবে না। ব্যবস্থাপনা কমিটি বা ক্ষেত্রমতো পরিচালনা কমিটি বা চেয়ারম্যান বা সভাপতি নির্ধারিত এখতিয়ার বা কার্যপরিধির বাইরে দৈনন্দিন প্রশাসনে কোনও অনিয়ম বা পাঠদান বাধাগ্রস্ত হলে কমিটি সার্বিকভাবে বা ক্ষেত্রমতো চেয়ারম্যান বা সভাপতি দায়ী থাকবেন এবং নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কমিটি বাতিল বা ক্ষেত্রমতো এর চেয়ারম্যান বা সভাপতিকে অপসারণ করতে পারবে।
আইনের চূড়ান্ত খসড়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খসড়া পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রিসভায় উঠানো হবে। ’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, সচিব কমিটিতে খসড়াটি অনুমোদন হওয়ার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন হলে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে ক্ষমতা খর্ব করতে হবে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির ওপর থাকায় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। বিধি-বিধানের বিদ্যমান দুর্বলতার কারণে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের যৌথ স্বাক্ষরে অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চাপ দিয়ে কমিটি প্রধান বা অন্য প্রভাবশালী সদস্যরা মিলে অর্থ ব্যয় করানোর ব্যবস্থা নেয়। এমন ঘটনার প্রমাণ হলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বাতিল করা হয়, কিন্তু বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার কারণে কমিটির সদস্য ও কমিটির সভাপতি বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান ব্যবস্থায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে ম্যানেজিং কমিটি, উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে গভর্নিং বডি।